Computerকম্পিউটারকম্পিউটার হার্ডওয়্যার

কম্পিউটারের মূল অংশ কয়টি ও কি কি – (বিভিন্ন অংশের পরিচিতি)

কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি

কম্পিউটারের মূল অংশ কয়টি এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ গুলোর পরিচিতি নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল লিখা হয়েছে। 

কম্পিউটার বা গণকযন্ত্র হল এমন একটা মেশিন যা নানাভাবে আমাদের রোজকার কোনো না কোনো কাজে দরকার লাগেই।

কিন্তু, আপনি কি জানেন কম্পিউটার আসলে একাধিক ডিভাইস বা যন্ত্রের সমষ্টি।

তবে, সবার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, যে আসলে কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে ?

কম্পিউটারের কাজ করার প্রক্রিয়া জানার পর আপনারা কম্পিউটারের নানান অংশ ও তাদের কাজ স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারবেন।

কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি:

সাধারণভাবে দেখতে গেলে, আমরা প্রথমে কীবোর্ড বা মাউস ব্যবহার করে কিছু তথ্য কম্পিউটার মনিটরের স্ক্রিনের মাধ্যমে টাইপ হতে দেখি।

তারপর, আমরা যে কাজের জন্যে কম্পিউটারকে নির্দেশ দিয়ে থাকি, সেটাই সে মনিটরের স্ক্রিনের মাধ্যমে তার ফলাফল দেখায়।

এই সমস্ত পদ্ধতিটাকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায় বলে, ইনপুট-প্রসেসিং-আউটপুট (Input-processing-output).

মানে, একটি কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়া থেকে শুরু করে সেখান থেকে সমাধান পাওয়া পর্যন্ত এই তিনটি (৩) প্রণালীতে কার্য করে থাকে।

এক্ষেত্রে, একটি কম্পিউটার তথ্য নেওয়া থেকে শুরু করে, সেই তথ্য ব্যবহার করে তার ফলাফল প্রকাশ করতে কম্পিউটারকে বেশ কতগুলো যন্ত্রাংশের উপর নির্ভর করতে হয়।

আর, আজকের আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হল কম্পিউটারের সিস্টেম এর বিভিন্ন অংশ ও তাদের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ?

কম্পিউটারের মূল অংশ কয়টি ও কি কি ?

চলুন প্রথমে আমরা জেনে নেই, কম্পিউটারের মূল অংশ কয়টি ও কি কি ?

আসলে, কম্পিউটার হল এমন একধরণের যন্ত্র যা অ্যালগরিদম যেটা গাণিতিক নির্দেশাবলীর মাধ্যমে প্রোগ্রাম করা হয়, যা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে গণনা করতে সক্ষম।

আর, এই যন্ত্রের ৪টি মূল সাধারণ অংশ থাকলে, তবেই তা কম্পিউটার বা গণকযন্ত্র হিসেবে পরিগণিত হয়।

কম্পিউটারের এই ৪টি অংশ হল –

১. ইনপুট ইউনিট,

২. মেমোরি বা স্টোরেজ ইউনিট,

৩. প্রসেসিং ইউনিট এবং

৪. আউটপুট ইউনিট।

কম্পিউটার যেহেতু ইনপুট-প্রসেস-আউটপুট এই পদ্ধতি মেনে কাজ করে, তাই এই পদ্ধতির প্রতিটা ধাপ পূরণ করার জন্যে এক বা একাধিক ডিভাইস বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে থাকে।

সেহেতু, আমরা কম্পিউটারের প্রক্রিয়াগুলোর সাথে সমতা বজায় রেখে এই অংশ বা কম্পোনেন্ট গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

১. ইনপুট ইউনিট:

প্রথমে যখন আমরা কম্পিউটারকে কোনো তথ্য পাঠাই বা নির্দেশ দেই তখন সেই প্রক্রিয়াকে আমরা ইনপুট প্রক্রিয়া বলি।

আর যে সমস্ত যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা কম্পিউটারকে তথ্য দিয়ে থাকি, সেই ডিভাইস গুলোই হল ইনপুট ইউনিট বা ইনপুট ডিভাইস।

বৈশিষ্ট্য:

  • মূলত, ইনপুট ইউনিটের মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমকে নির্দেশ, ডেটা বা সংকেত পাঠানো হয়।
  • ইনপুট ডিভাইস কম্পিউটার সিস্টেমে টেক্সট, ছবি, ভিডিও বা শব্দের মতো তথ্য পাঠাতে কাজে লাগে।

উদাহরণ: 

এই ইনপুট উনিটের মধ্যে প্রধান হল কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, জয়স্টিক, মাইক্রোফোন ও অন্যান্য।

২. মেমোরি বা স্টোরেজ ইউনিট:

স্টোরেজ ইউনিট হল কম্পিউটার সিস্টেমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই অংশে কম্পিউটার সমস্ত নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম, নানা তথ্য ও ফলাফল জমা করে রাখতে পারে।

আমরা যেমন আমাদের মাথায় সব তথ্য জমা রাখি ও প্রয়োজনে সেই তথ্য অনুযায়ী কাজ করি, ঠিক তেমনি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এর মধ্যে থাকা স্টোরেজ ইউনিট তথ্য প্রক্রিয়াকরণে (প্রসেসিং) সাহায্য করে।

এই ইউনিট ছাড়া কোনো কম্পিউটারই চলতে পারে না।

একটি স্টোরেজ ইউনিট ডেটা ফাইল সংরক্ষণ, পোর্ট ও এক্সট্র্যাক্ট করার জন্যে ব্যবহার করা হয়।

এই মেমোরি বা স্টোরেজ ইউনিট দুই ধরণের হয় –

প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস এবং সেকেন্ডারী স্টোরেজ ডিভাইস।

এই প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের মধ্যে পড়ে RAM (Random Access Memory) ও ROM (Read-Only Memory)

র্যাম (RAM)

RAM হল সাময়িক মেমোরি, যা যেকোনো কম্পিউটার অবশই ব্যবহার করে থাকে যেকোনো সক্রিয় প্রোগ্রাম (active program) এর সাথে জড়িত তথ্য, ডাটা বা নির্দেশ গুলোকে প্রসেস করার জন্যে।

RAM মূলত কম্পিউটারের একটি “short-term memory“.

রোম (ROM)

অন্যদিকে, ROM হল সেই ধরণের কম্পিউটার মেমোরি, যেখানের সঞ্চিত তথ্য কোনোদিন ডিলিট করা বা পরিবর্তন করা যায় না। শুধুমাত্র ROM-এ থাকা তথ্য আমরা পড়তে বা ব্যবহার করতে সক্ষম।

আর, এই মেমরিতে থাকা তথ্য কেবলমাত্র কম্পিউটারের প্রস্তুতকারকেরা কম্পিউটার তৈরির সময় হার্ডওয়্যারে ভরে দেয়।

রমের মধ্যেই একটি কম্পিউটার চালু করার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্সট্রাকশন্স গুলো দেওয়া থাকে, যা বুটিং-এর সময় একটি কম্পিউটার মানুষের কোনো সাহায্য ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে নেয়।

এই ROM প্রধাণত দুই ধরণের হয়।

এছাড়াও, কম্পিউটারের মধ্যে বাইরে থেকে এক্সট্রা মেমরি স্টোর করা যায়, যাকে আমরা টারশিয়ারী মেমরি বলে থাকি।

বৈশিষ্ট্য: 

  • স্টোরেজ ডিভাইস থেকে আমরা ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে প্রতিস্থাপনও করতে পারি।
  • স্টোরেজ ইউনিট পাঠযোগ্য, লিখনযোগ্য এবং পুনর্লিখনযোগ্য। অর্থাৎ, প্রয়োজন না হলে আমরা সংরক্ষিত তথ্য ডিলিট, বা ট্রান্সফার করে দিতে পারি।

উদাহরণ: 

হার্ড ড্রাইভ ডিস্ক, ফ্লপি ডিস্কস, সিডি, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, ও অন্যান্য।

৩. প্রসেসিং ইউনিট:

আমরা যে তথ্য ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠাই, সেই তথ্য বা ডেটা গুলো প্রক্রিয়াকরণের (process) জন্যে কম্পিউটারের প্রয়োজন একটা প্রসেসিং ইউনিটের।

যেহেতু, কম্পিউটার গাণিতিক ও সাংকেতিক ভাষায় কাজ করে, আর আমরা যখন তথ্য ইনপুট করি, তখন সেটা আমাদের অর্থাৎ মানুষের নিজস্ব ভাষায় ইনপুট করি, তাই কম্পিউটারের আমাদের ভাষাকে গাণিতিক সংকেতে রূপান্তরিত করার দরকার পড়ে।

নাহলে, একটা যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটার কখনোই সরাসরি মানুষের ভাষায় পাঠানো তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে না।

এই কারণেই, কম্পিউটারের দরকার প্রসেসিং ইউনিটের।

আর, এই কাজের জন্যে কম্পিউটারের থাকে একটা করে সেন্ট্রাল প্রসেসসিং ইউনিট (CPU)

সিপিইউ (CPU), মূলত যেকোনো ধরণের জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে ও জটিল তথ্য ব্যবহার করে কাঙ্খিত ফলাফল কম্পিউটার মনিটরে দেখাতে পারে আর আমাদের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ীও কাজ করতে পারে।

সিপিইউ হল ইনপুট ও আউটপুট ইউনিটের মধ্যেকার মাধ্যম, যার কাজ হল ইনপুট ডিভাইস থেকে তথ্য গ্রহণ করে, তা প্রক্রিয়া করে আউটপুট ডিভাইসে সে ফলাফল পাঠিয়ে দেওয়া।

এই সিপিইউ-এর তিনটি প্রধান অংশ থাকে, সেগুলো হল –

  • মেমোরি ইউনিট,
  • কম্যান্ড ইউনিট
  • এরিথমেটিক এন্ড লজিকাল ইউনিট।

বৈশিষ্ট্য:

  • সিপিইউ একই গতিতে এবং নির্ভুলতার সাথে সেকেন্ডের কম সময়ে লক্ষ-লক্ষ কাজ বা গণনা করতে পারে।
  • প্রসেসিং ইউনিট ১০০% নির্ভুলতার সাথে গণনা করতে সক্ষম যদি না আমাদের দেওয়া তথ্যে কোনো ভুল থাকে।

৪. আউটপুট ইউনিট:

আউটপুট ইউনিট হল সেইসব ডিভাইস গুলো যার মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের দ্বারা প্রাপ্ত ফলাফল আমরা দেখতে, পড়তে বা শুনতে পারি।

কম্পিউটার সবসময়  মানুষের বোধগম্য ভাষাতেই এই ফলাফল পাঠিয়ে থাকে।

আউটপুট ডিভাইস গুলি অগণিত আকারে ডেটা সরবরাহ করতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হল অডিও, ভিজ্যুয়াল সফ্ট কপি এবং হার্ড কপি।

বৈশিষ্ট্য:

  • আউটপুট ইউনিট গুলো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট থেকে পাওয়া ফলাফলকে আমাদের বোধগম্য ফর্মাট বা মাধ্যমে রূপান্তরিত করে।

উদাহরণ:

স্পিকার, মনিটর, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, হেডফোন, ও ইত্যাদি।

আমাদের শেষ কথা,,

মোটামুটি, একটা বেসিক কম্পিউটারের এই চারটে অংশ বর্তমান থাকতেই হবে, নাহলে এই মেশিন চলতে পারবে না।

এরপর, কাজের ধরণের ভিত্তিতে, বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্যে আরও অনেক যন্ত্র কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আজকে আমাদের কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।

লেখাটি আপনাদের কাছে হেল্পফুল মনে হলে, অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে সেটা নিচে কমেন্টের মাধ্যমে অবশই জানাতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button