Uncategorized

রাডার কীভাবে কাজ করে? কীভাবে লুকায়িত বস্তু খুঁজে বেড় করে?

কীভাবে রাডার এড়ানো সম্ভব?

মনে করুন এক অন্ধকার রাতে একটি বিশাল প্লেনকে একটি জনবহুল শহরে ল্যান্ড করার চিন্তা করছেন—কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রচণ্ড কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে রয়েছে, তো কীভাবে আপনি ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিরাপদে প্লেনটি ল্যান্ড করবেন? আপনি তো কিছু দেখতেই পাচ্ছেন না! প্লেন পাইলটরা রাডার নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করে থাকেন; এটি একটি দেখার মাধ্যম বা উচ্চ রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে লুকায়িত কোন বস্তুকে দেখতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় শত্রু পক্ষের বিমানকে খুঁজে বেড় করার জন্য একটিকে প্রধানত উন্নতিকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে এর প্রশস্ত ব্যবহার রয়েছে। বিমান পাইলটরা বিমান ছাড়ার সময়, বিমানে থাকা কালীন সময় এবং বিমান ল্যান্ড করার সময় এটি ব্যবহার করে। পুলিশ অবৈধ স্পীডে চালানো বাইক বা গাড়িকে ডিটেক্ট করতে এটি ব্যবহার করে। এমন কি পৃথিবীর এবং অন্য গ্রহ-উপগ্রহের মানচিত্র পেতে, স্যাটেলাইট এর অবস্থান জানতে নাসাও রাডার ব্যবহার করে। তো চলুন, এটি কীভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…


রাডার কি?

এই পৃথিবীতে থাকা যেকোনো বস্তুকে আমরা দেখতে পাই আলোর কারণে, যা সূর্য থেকে আসে এবং বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে। আবার আপনি যদি রাতে কোন স্থানে চলতে চান, তবে টর্চ লাইট ব্যবহার করে রাস্তা আলোকিত করে তবেই ঠিকঠাক চলতে পারবেন। টর্চ থেকে আলো সামনে বস্তুর উপর এসে পড়ে এবং বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়ে; ফলে বস্তুটি দেখতে পাওয়া যায়। আলোর প্রতিফলনের সময় এবং আলোর প্রতিফলনের মাত্রা থেকে আপনা ব্রেইন সহজেই বুঝতে পারে আপনি কোন বস্তু থেকে ঠিক কতো দূরে রয়েছেন এবং সেই অনুসারে যেকোনো বস্তুকে আরামে পাস কাটিয়ে চলে যেতে পারেন।

রাডার অনেকটা একই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। “রাডার” শব্দটির অর্থ হচ্ছে, রেডিও ডিটেকশন ন্ড রেঞ্জিং—আর এর নামের পুরা অর্থ শুনেই অনেক খানি ধারণা পাওয়া যায়, এটি কীসের উপর কাজ করে। ধরুন ঘন কুয়াশার মধ্যে একটি প্লেন পাইলট তার প্লেন নিয়ে এগোচ্ছে, কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না কোথায় যাচ্ছে, এই অবস্থায় এটি এদের সাহায্য করে থাকে।

কুয়ার সামনে কুয়ার মুখের দিকে হেলে কখনো জোরে আওয়াজ করে দেখেছেন? আপনি যে আওয়াজই করুন না কেন সেটা আবার প্রতিফলিত হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসে। এটিও মূলত প্রতিধ্বনি বা ইকোর সাহায্যে কাজ করে। বিমান থেকে একটি সবিরাম রাডার তরঙ্গ ছুড়ে মারা হয় সামনের দিকে, তরঙ্গ ছুড়ে মারার পরে দেরি করা হয় সামনের কোন বস্তু থেকে তার প্রতিধ্বনির জন্য, যদি প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় তবে সহজেই ডিটেক্ট হয়ে যায় সামনে কোন বস্তু রয়েছে কিনা। এক কথায় বলতে রাডার বাঁদুরের মতো কাজ করে, যারা প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে রাতে চলাফেরা করে এবং সামনের বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়।

রাডার কীভাবে কাজ করে?

প্লেন, ট্রেন, পানি জাহাজ আর যেখানেই এটি লাগানো থাকুক না কেন, এটি চলার জন্য কিছু একই নিয়ম অসুরন করে এবং একই ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে কাজ করে। কিছু যন্ত্রাংশ রয়েছে যেগুলো রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে, কিছু যন্ত্রাংশ সেই তরঙ্গকে শূন্যে ছুড়ে দিতে সাহায্য করে, কিছু ফিরে আসা তরঙ্গকে গ্রহন করে এবং কিছু যন্ত্রাংশ মিলে বিভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করাতে সাহায্য করে—যাতে এর অপারেটররা সহজেই সকল তথ্য গুলো বুঝতে পারে।

রাডারে যে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তা উৎপন্ন হয় একটি যন্ত্রাংশ দ্বারা যার নাম “ম্যাগনেট্রন“। রেডিও তরঙ্গ এবং আলো একই গতিতে পথ অতিক্রম করতে পারে; কিন্তু রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গ গুলো অনেক লম্বা হয় এবং এর কম্পাঙ্ক অনেক দুর্বল শক্তির হয়ে থাকে। আলোক তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৫০০ ন্যানোমিটার হয়ে থাকে (১ মিটার থেকে ৫০০ বিলিয়ন গুন ছোট), আর রাডারে ব্যবহৃত হওয়া রেডিও তরঙ্গ আলোক তরঙ্গ হতে মিলিয়ন গুন বেশি লম্বা হয়ে থাকে।

আলো এবং রেডিও তরঙ্গ উভয়েই কিন্তু ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক স্পেকট্র্যামের একটি অংশ, এর মানে হলো এদের মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ম্যাগনেটিক্যাল এনার্জি একসাথেই বিদ্যমান থাকে এবং তা বাতাসে ছুড়ে মারা যায়। ম্যাগনেট্রন আসলে একটি মাইক্রোওয়েভ তৈরি করে যার সাদৃশ্য মাইক্রোওভেনে দেখতে পাওয়া যায়। মাইক্রো ওভেনে সাথে এখানে পার্থক্য হচ্ছে; ম্যাগনেট্রনের উৎপন্ন তরঙ্গ বহু মাইল দূর পর্যন্ত পাঠানো যায়, মানে এর তরঙ্গ প্রচণ্ড পরিমানে শক্তিশালী হয়ে থাকে।

একবার রেডিও তরঙ্গ তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে একটি এন্টেনা রয়েছে যা ট্র্যান্সমিটার হিসেবে কাজ করে এবং তরঙ্গকে সামনের দিকের স্পেসে পাঠিয়ে দেয়। রাডারটি সর্বদা ঘুরতে থাকে যাতে এটি বড় এরিয়া থেকে আসা প্রতিফলন হ্যান্ডেল করতে পারে। রাডার থেকে ছড়িয়ে পড়া রেডিও তরঙ্গ আলোর গতিতে ছুটতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোথাও সেটি বাঁধা প্রাপ্ত হচ্ছে। কোন বস্তুর সাথে বাঁধা পেয়ে প্রতিফলিত হওয়া তরঙ্গও আলোর গতিতে ফিরে আসে। আর এই তরঙ্গ গতির অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, ধরুন শত্রু পক্ষের বিমান ৩,০০০ কিলোমিটার/ঘন্টাতে এগিয়ে চলছে তাহলে এটিকে ধরতে গেলে এর চেয়েও দ্রুত কোন ব্যবস্থা নিশ্চয় থাকতে হবে। এরপরে তরঙ্গ আবার প্রদান যন্ত্রের কাছে ফেরত আসে আর অ্যালার্ম বেজে ওঠে। আর সময়ের কোন সমস্যা নেই, কেনোনা এর গতি আলোর গতির সমান অর্থাৎ যদি কোন শত্রুর বিমান ১৬০ কিলোমিটার দুরেও থাকে তবে তাকে ডিটেক্ট করে তরঙ্গ রাডারে ফেরত আসতে ১ সেকেন্ডের ১ হাজার গুন কম সময় লাগবে।

কীভাবে রাডার এড়ানো সম্ভব?

শত্রু বিমান সনাক্ত করতে রাডারকে প্রচণ্ড প্রধান্যের সাথে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন আপনার কাছে যদি সুপার রাডার প্রযুক্তি থাকে যেটা যেকোনো লুকায়িত বস্তু ডিটেক্ট করতে সক্ষম তবে নিশ্চিতভাবে আপনার শত্রুর কাছেও রয়েছে। আমি আপনার শত্রু বিমান সনাক্ত করার ক্ষমতা রাখলে নিশ্চয় আপনার শত্রুও আপনার বিমান সনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। এই অবস্থায় আমাদের এমন এক প্লেন প্রয়োজনীয় যা একে বারে গোপনে আর লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং অবশ্যই রাডারে ধরা না পড়ে। অ্যামেরিকান এয়ার ফোর্সের কাছে এমন একটি অশুভ চেহারার বিমান রয়েছে যার নাম বি২ বোম্বার; এর এই বিমানের গঠন এমন যা রাডার থেকে আসা বীম শুষে নিতে পারে ফলে রাডার আর কিছুই ডিটেক্ট করতে পারে না।


রাডার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত এক অসাধারণ যন্ত্র। আর আশা করছি এটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরে আপনি অনেক আনন্দিত। এ ব্যাপারে আপনার মনে আরো কোন প্রশ্ন রয়েছে কি? আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। তাছাড়া পোস্টটি শেয়ার করতে একদমই ভুলবেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button