Technology

ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং কি? কেন আপনার ইন্টারনেট স্পীড স্লো হয়ে যায়?

কেন কোম্পানিরা ব্যান্ডউইথ থ্রোটল করে?

ইন্টারনেটকে অবশ্যই ওপেন এবং নিরপেক্ষ রাখা প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ভাবে ইন্টারনেটের উপর কবজা করতে চায়, আর এই জন্যই আমাদের ইউজারদের পড়তে হয় নানান অসুবিধার মধ্যে। ইন্টারনেট আইন আলোচনা করে নেট নিউট্রালিটি নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেলটি দেখতে পারেন। সাথে এই টপিকটি পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য, ব্যান্ডউইথ ব্যাখ্যা আর্টিকেলটি অবশ্যই পড়ুন। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং (Bandwidth Throttling) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, এখান থেকে পরিষ্কারভাবে জানতে পাড়বেন, কেন আপনার ইন্টারনেট স্পীড স্লো হয়ে যায়, কে এই স্পীড লিমিট করে, কিভাবে এই লিমিট বাইপাস করতে পাড়বেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ভরপুর করা হয়েছে, সুতরাং ঠাণ্ডা মাথায় বসে আর্টিকেলটি উপভোগ করুণ।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং

যদি সহজ ভাষায় বা এক কথায় জবাব দেই, ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং বলতে বুঝায়, আপনি ইন্টারনেটে কোন কিছু কতোদ্রুত অ্যাক্সেস করতে পাড়বেন তার উপর লিমিটেশন। আপনি যতোটুকু স্পীড পাওয়ার জন্য টাকা প্রদান করছেন, যদি তার চেয়েও ইন্টারনেট স্পীড কমিয়ে দেওয়া হয় সেটা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট কানেকশন স্পীড হোক বা নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইট স্পীড হোক, তাহলে সেটাকে ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং বলা হবে। একে আরেক ভাষায় ডাটা থ্রোটলিং (Data Throttling) বা ইন্টারনেট বটলনেক (Internet Bottleneck) বলা হয়।

 

আপনি হয়তো ৫ মেগাবিট/সেকেন্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ স্পীডের জন্য আপনার আইএসপিকে টাকা প্রদান করছেন, কিন্তু যদি দিনের নির্দিষ্ট কোন সময় কাম্য স্পীড না পান, তাহলে অবশ্যই আপনার আইএসপি আপনার ডাটা থ্রোটলিং করছে। আবার অনেক আইএসপি টরেন্টিং করার সময় থ্রোটলিং করে থাকে। সাধারণ ইন্টারনেট স্পীড হয়তো ভালো পাবেন, কিন্তু টরেন্ট ব্যবহার করার সময় স্পীড খারাপ হয়ে যাবে। ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং সাধারণত আপনার আইএসপি ই করে থাকে, কিন্তু আরো অনেকভাবে ডাটা থ্রোটলিং হতে পারে। আপনার ডিভাইজের যদি ততোটা স্পীড সমর্থন করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আপনার ফোন বা কম্পিউটারই এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বটলনেক হিসেবে কাজ করবে। আবার বিভিন্ন ওয়েবসাইটও ডাটা থ্রোটলিং করে রাখে।

কেন কোম্পানিরা ব্যান্ডউইথ থ্রোটল করে?

দেখুন ডাটা থ্রোটলিং অবশ্যই আপনার কাছে বিরক্তিকর ব্যাপার, কিন্তু আইএসপি বা আলাদা ইন্টারনেট কোম্পানিদের কাছে টোস্টের উপর মধুর মতো ব্যাপার। আপনার ব্যান্ডউইথ থ্রোটল করে তারা নানান সুবিধা নিয়ে থাকে, আবার অনেকে টাকাও ইনকাম করে। ডাটা থ্রোটল বিশেষ করে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার’রাই বেশি ব্যবহার করে এবং অনেক টাইপের থ্রোটলিং করে থাকে। যেমন ধরুন, আপনার আইএসপির দিনের এমন কিছু সময় যখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনেক বেড়ে যায়, তখন সবাইকে ভালো স্পীড সরবরাহ করা সম্ভব হয় না, তাই ইউজাদের ব্যান্ডউইথ স্পীড কমিয়ে দেয়, এতে তাদের বেশি ইউজার হ্যান্ডেল করার জন্য যে যন্ত্রপাতি প্রয়োজনীয় হতো, সেটার খরচ থেকে তারা বেঁচে যায়।

আবার অনেক আইএসপি ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইট বা সার্ভিসের উপর স্পীড লিমিট করে রাখে। যেমন ধরুন আপনি ইউটিউব থেকে প্রচণ্ড পরিমানে ডাটা ডাউনলোড করছেন বা টরেন্ট ব্যবহার করছেন অথবা পিটুপি ফাইল শেয়ারিং থেকে অসংখ্য জিবি ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার আইএসপি ঐ ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেট সার্ভিসের উপর স্পীড লিমিট করে দিতে পারে। যদি আপনি ৩জি বা ৪জি ইন্টারনেট মানে সিম থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে নিশ্চয় “ফেয়ার ইউজ পলিসি” সম্পর্কে শুনে থাকবেন। এখানে কোন ইন্টারনেট প্যাকেট নির্দিষ্ট থ্রেসহোল্ড অতিক্রম করার পরে ইন্টারনেট স্পীড স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্লো হয়ে যায়, যেটা ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং এর মধ্যে পরে।

তো বুঝতেই পাড়ছেন, আইএসপি’রা আপনার ইন্টারনেট ডাটা সহজেই থ্রোটল করতে পারে, আর এটা একেবারেই কমন ব্যাপার, সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়েই আইএসপি’রা এই কাজ করে চলছে। তবে শুধু আইএসপি’রাই একা ডাটা থ্রোটলিং করে না। হতে পারে আপনি কোন শেয়ারড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন, আর সেই নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনও আপনার ডাটা থ্রোটলিং করতে পারে। এমনকি অনেক ওয়েবসাইট নিজে থেকেই ব্যান্ডউইথ স্পীড লিমিট করে রাখে, যাতে বেশি ইউজারদের একসাথে সেবা দিতে পারে। ইন্টারনেট থেকে ফ্রী ডাউনলোড ওয়েবসাইট গুলোতে হয়তো দেখতে পাবেন আপনার কানেকশন স্পীড থেকে ডাউনলোড স্পীড অনেক কম হয়, এখানে হতে পারে আপনার আইএসপি ডাটা থ্রোটলিং করছে, আবার হতে পারে ঐ ওয়েব সার্ভার নিজে থেকেই ডাটা থ্রোটলিং করছে।

অনেক অনলাইন গেম বা অ্যাপ ডাটা লিমিট করে রাখে, যাতে বেশি ইউজার সাপোর্ট দিতে পারে এবং ওভারলোডিং প্রবলেম না দেখা দেয়। এখন বলবেন গুগল কিভাবে এতো ফাস্ট স্পীড দেয়? তারা কেন ডাটা থ্রোটলিং করে না? আসলে গুগল বা ইন্টারনেটের বড় কোম্পানিদের কথা আলাদা, এরা সিঙ্গেল সার্ভার ব্যবহার করে না, এদের প্যারালেল ভাবে একসাথে অনেক সার্ভার কানেক্ট থাকে, আর এদের হিউজ ব্যান্ডউইথ সাপোর্ট থাকে, তাই গুগলের ডাটা থ্রোটলিং প্রয়োজন পরে না। যখন আপনি ক্লাউড ব্যাকআপ সার্ভিসে আপনার বিশাল পরিমানে ডাটা আপলোড করেন, সেক্ষেত্রে ক্লাউড সার্ভিস প্রভাইডার সার্ভার সাইড থেকে আপনার আপলোড স্পীড লিমিট করে দেয়, আপনার আপলোডিং করতে অনেক সময় লেগে যায়, কিন্তু তাদের অনেক টাকা সেভিং হয়ে যায় এতে।

আপনার আইএসপি ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং করছে না তো?

উপরের প্যারাগ্রাফেই আলোচনা করেছি, আপনার আইএসপি বিভিন্ন টাইপের ব্যান্ডউইথ লিমিটেশন লাগাতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার আইএসপি আপনার ব্যান্ডউইথ থ্রোটল করছে কিনা। যদি আপনার নির্দিষ্ট পরিমানে ডাটা ডাউনলোড করার পরে স্পীড স্লো হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সেটা সহজেই বুঝতে পাড়বেন, আপনার আইএসপি আপনাকে স্পীড লিমিট করেছে। মোবাইল ইন্টারনেটে অবশ্য “ফেয়ার ইউজ পলিসি” কথাটি উল্লেখ্য থাকে, কিন্তু অনেক ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রভাইডার আপনাকে বলবে আনলিমিটেড ইউজ করতে পাড়বেন, কিন্তু ১০০ জিবি বা এরকম কোন পরিমান ডাটা ইউজ করার পরে লিমিটেশন লাগিয়ে দেবে। মাসের শুরু দিকে আপনার ইন্টারনেট স্পীড চেক করে দেখুন, তারপরে মাসের শেষের দিকের স্পীড চেক করুণ, যদি দুইটির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পার্থক্য দেখতে পান, অবশ্যই আপনার আইএসপি আপনাকে স্পীড লিমিট করেছে।

তবে টেস্টিং করার সময় যদি আপনি ডাউনলোড বা আপলোড লাগিয়ে রাখেন, কিংবা কেউ যদি আপনার কানেকশন ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে স্পীড টেস্ট সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যাবে না। তাই অবশ্যই কোন ডাউনলোড/আপলোড না চালু রেখে স্পীড টেস্ট করতে হবে, সাথে অবশ্যই আলাদা আলাদা সার্ভার সিলেক্ট করে স্পীড টেস্ট করতে হবে। আপনি দিনের বিভিন্ন সময় এবং রাতে স্পীড টেস্ট করতে পারেন। যদি দেখেন দিনের কখনো স্পীড নর্মাল, কিন্তু কখনো খুব স্লো, আবার রাত ৩টার দিকে অত্যন্ত বেশি স্পীড, এর মানে দিনে আপনার আইএসপি ডাটা লিমিট করে রাখছে।

আর আলাদা টাইপের থ্রোটলিং টেস্টিং করা অনেক মুশকিলের কাজ। আপনার বোঝা খুবই কষ্টকর হতে পারে, কোন সাইট বা সার্ভিস আপনাকে লিমিট করেছে বা আপনার আইএসপি কাকে কাকে লিমিট করে রেখেছে। অনেক সময় আইএসপি বিশেষ সাইট থেকে টাকা নিয়ে অনুরুপ আলাদা সাইটের স্পীড লিমিট করে রাখতে পারে, এটা নেট নিউট্রালিটির সম্পূর্ণ বিপক্ষে। আপনার আইএসপি জিজ্ঞাস করার মাধ্যমে হয়তো আপনি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট থ্রোটলিং লিস্ট পেয়ে যেতে পারেন।

ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং বাইপাস করা সম্ভব?

হ্যাঁ, কিছু টাইপের ব্যান্ডউইথ থ্রোটল বাইপাস করা সম্ভব। যদি আপনার আইএসপি থেকে কোন ওয়েবসাইট লিমিট করা থাকে বা যেকোনো সার্ভার লিমিট করা থাকে, সেটাকে ভিপিএন ব্যবহার করে স্পীড লিমিট বাইপাস করা সম্ভব। ভিপিএন আপনার ডাটা ট্র্যাফিককে এনক্রিপশন করিয়ে প্রাইভেট ট্যানেলের মধ্যদিয়ে কানেকশন তৈরি করে, এতে আপনার আইএসপি বুঝতেই পারে না আপনি কোন সাইট কানেক্ট করলেন, তাই সকল সাইট বা সার্ভার সমান স্পীডে লোড হয়। ভিপিএন নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেলে আমি বিষয়টি আরো পরিষ্কার করেছি।

যদি আপনার লোকাল নেটওয়ার্ক অ্যাডমিন, হতে পারে আপনার অফিসে আপনাকে বিভিন্ন সাইট থেকে লিমিট করা হয়েছে সেখানেও ভিপিএন ব্যবহার করে লিমিটেশন বাইপাস করতে পাড়বেন। যদি ভিপিএন ব্যবহার না করতে দেয়, প্রক্সি বা আলাদা নেটওয়ার্ক কনফিগার করেও লিমিট বাইপাস করা সম্ভব। তবে সব টাইপের ডাটা থ্রোটলিং বাইপাস সম্ভব নয়। যদি আইএসপি দিনের বিভিন্ন সময় লিমিট করে দেয়, মানে আপনার সম্পূর্ণ ট্র্যাফিক যদি লিমিট করে, সেটা বাইপাস করা যাবে না। আবার ফেয়ার ইউজ পলিসিও বাইপাস করা যাবে না। সার্ভার সাইড লিমিটেশন ও বাইপাস করা যাবে না। যদি দেশ অনুসারে কোন সার্ভার স্পীড লিমিট থাকে, সেক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে তা আনলক করা যেতে পারে। তবে অনলাইন ব্যাকআপ সার্ভিস গ্রহন করার আগে অবশ্যই রিভিউ দেখে নেওয়া উচিৎ, তারা ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং করে কিনা।

দুর্ভাগ্যবশত আপনার আইএসপি আপনাকে বিভিন্নভাবে থ্রোটলিং করলে আপনি খুব বেশি কিছু করতে পাড়বেন না। তবে অন্য আইএসপিতে সুইচ করে দেখতে পারেন। এতে হয়তো আপনার অসুবিধা দুর হলেও হতে পারে।

আশা করছি আর্টিকেলটি থেকে ব্যান্ডউইথ থ্রোটলিং এর সম্পূর্ণ পরিষ্কার ধারণা পেতে আপনি সক্ষম হয়েছেন। আপনার আইএসপি কি ডাটা থ্রোটলিং করছে? আর আপনি কি সেটা টেস্ট করে বুঝতে পেড়েছেন? আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button