Technology

স্মার্ট রিং: কিভাবে কাজ করে?

কেন এটি একটি বেস্ট পরিধেয় প্রযুক্তি?

আমরা নিশ্চয়ই জানি যে,সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্ট-ওয়াচ এবং স্মার্ট-ব্যান্ড শ্রেনির গ্যাজেটস মানুষের ভেতর ব্যাপক সারা ফেলেছে। হতে পারে আপনাদের ভেতরও অনেকজন ইতিমধ্যে স্মার্টওয়াচ বা স্মার্টব্যান্ড এর মত ডিভাইস ব্যবহার করেছেন বা করছেন। এসব ওয়্যারয়েবল ডিভাইস মূলত আপনার স্মার্টফোনের সাথে কানেক্টেড থেকে আপনাকে নানারকম তথ্য যেমন: নোটিফিকেশন, এমনকি শারীরিক গতিবিধি ইত্যাদি দেখিয়ে সাহায্য করে।

হঠাৎ করে ফোনের নোটিফিকেশন সাউন্ড বেজে উঠলো, তাৎক্ষনিক ভাবে আপনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন আপনার মোবাইল স্ক্রিনে। তবে স্মার্ট ওয়্যারয়েবল ডিভাইস থাকলে নোটিফিকেশন এর জন্য ফোন এর দিকে ব্যাস্ত হতে  হত না।  এসব স্মার্ট ওয়্যারয়েবল ডিভাইস আপনাকে আপনার এই অভ্যাসকে বদলে দিতে সহযোগিতা করত। আপনি যখন কোনো কাজে ব্যাস্ত, এমতাবস্থায় ফোনের নোটিফিকেশন বাজলে আপনাকে আর ফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত হতে হবে না ; কেবল আপনার সাথে থাকা ওয়্যারেবল ডিভাইস এর দিকে একবার একটা ছোট্ট নজর দিলেই হবে।
[su_animate]

ঘন ঘন নোটিফিকেশন এর  ফলে স্মার্টফোনের দিকে ব্যাস্ত হয়ে যাওয়া অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি খারাপ অভ্যাস। সে হিসেবে বলতেই পারি যে, আপনি প্রযুক্তির এই খারাপ অভ্যাসকে বন্ধ করার জন্য আরেকটু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সুতরাং আধুনিক ওয়্যারেবল ব্যান্ড বা ওয়াচ এমনকি স্মার্টরিং হাতে পড়ার মাধ্যমে, আপনাকে কিছু সময় আর স্মার্টফোনের দিকে ব্যয় করতে হবে না। আপনার হাতেই দেখতে পারবেন যে, স্মার্টফোনে যে নোটিফিকেশন আসল তা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিনা।

[/su_animate] আজ কথা বলব স্মার্ট রিং নিয়ে। স্মার্ট রিংকে আমরা বাংলায় বলতে পারি স্মার্ট আংটি । এখন যেমন বাজারে স্মার্ট ওয়াচের ব্যাপক দৌড়াত্ব এবং চাহিদা ; এটা নিশ্চিত যে আপনি কিছুদিন বাজারে ওয়্যারেবল স্মার্ট রিং ও দেখতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলে চলুন এই স্মার্ট রিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। স্মার্ট রিং এর সাইজ এর তুলনায় অনেক বেশি ফিচার প্রদান করতে পারবে।


যেহেতু এখনও ব্যাপকভাবে স্মার্ট রিং উৎপাদন এবং বাজার-জাত শুরু হয়নি ; তাই এখনও বোঝা যাচ্ছে না হাতের আঙুলের ওপর পড়া যাবে এমন একটি ডিভাইসে কতটা ফিচার বিদ্যমান থাকবে। বর্তমান সময়ে বেশ কিছু স্মার্ট রিং এর পরীক্ষামূলক প্রোটোটাইপ মডেল বের হয়েছে। যেখান থেকে ধারনা পাওয়া যায় আসছে নিকট ভবিষ্যতে স্মার্ট রিং ওয়্যারয়েবল ডিভাইসটি কি কি ফিচার সম্বলিত হবে। আর এমনই একটি প্রোটোটাইপ বের করেছে রিংলি নামক একটি স্মার্ট রিং তৈরিকারক কোম্পানি। আর এই রিং টিতে থাকবে সুন্দর ক্রিস্টাল জেম, যা কিনা বিভিন্ন রঙে জলতে পারে। আর মজার ব্যাপার হল যে, এই রিংলি স্মার্ট রিংটির বক্স এর চার্জার তথা ওয়ারলেস চার্জিং ডক  হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং বক্সটির ভেতর রিংটি প্লেস করলেই এটির চার্জ হওয়া শুরু হয়ে যাবে

রিংলির এই স্মার্ট রিংটি নিয়ন্ত্রন করা যাবে রিংলি এর মোবাইল অ্যাপ দিয়ে। এটা নিশ্চিত যে সকল প্রকার মেসেজ বা ফোন কল আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।আর সেজন্যই আপনি রিংলি অ্যাপের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কনট্যাক্ট সিলেক্টেড করে দিতে পারবেন। যার ফলে সেসব কনট্যাক্ট থেকে কোনো মেসেজ আসলে আপনার হাতের স্মার্ট রিংটি ভাইব্রেট করবে এবং একটি আলো জ্বলা শুরু হবে। রিংলির এই স্মার্ট আংটিতে একেক একেক কনট্যাক্ট এর জন্য আলাদা আলাদা প্রায় ৫ প্রকার আলো সেট করা যাবে। যেমন ধরুন,আপনার বস ফোন দিলে স্মার্ট রিংটি ভাইব্রেট করবে, পাশাপাশি লাল আলো আপনি সেট করে দিলেন, সেই লাল আলো জ্বলবে। আবার আপনার বন্ধুর ক্ষেত্রে আপনি সবুজ আলো সেট করে দিলেন ; ব্যাপারটা দারুন না?

টামো নামক একটি কোম্পানির আরেকটি স্মার্ট রিং লঞ্চ হয়েছে যেটি দেখতে আরও স্লিক এবং এর সাথে একটি এলসিডি ডিসপ্লে রয়েছে। বস্তুতই ডিসপ্লেটি অনেক ছোট এবং কেবল আইকন দেখাতে পারবে এই সাইজের। আপনার মেইল অ্যাকাউন্টে ধরুন ৫ টি নতুন মেইল আসল তাহলে, তাহলে আপনার স্মার্ট রিংএ মেইল আইকন এর অপর ৫ লেখা দেখাবে। পরে যখন আপনি ফোনে সেই মেইল চেক করবেন, তা মুছে যাবে। একইভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার,টুইটার ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আপনি আপনার স্মার্ট রিং এর ভেতর নোটিফিকেশন পেতে পারবেন। যা হয়ত আপনার ঘন ঘন স্মার্টফোনের দিলে তাকানোর অভ্যাস থেকে মুক্তি দিতে পারবে। রিংলি এর থেকে এই স্মার্ট রিং এর বড় পার্থক্য হল যে, এতে একটি ছোট্ট এলসিডি টাচ প্যানেল রয়েছে। যেখানে আপনি আইকন গুলো ডানে বায়ে সোয়াইপ করার মাধ্যমে একেক অ্যাপ এর নোটিফিকেশন দেখতে পারবেন।

আপনার হাতের রিং থেকে স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন সম্পর্কে জানা অনেকটা মানায়, তবে ব্যাপার যদি হয় এরকম যে, আপনি রিং দিয়ে অন্যান্য ডিভাইস কন্ট্রোল করতে পারবেন? লগবার নামক একটি জাপানিজ কেম্পানি এই কাজটিকেই সম্ভব করেছে। আর এই লগবার কোম্পানি তাদের এই ‘ রিং জিরো ‘ স্মার্ট রিংটির মাধ্যমে যেকোন ব্লুটুথ ইনেবলড ডিভাইসকে কন্ট্রোল করার সুযোগ করে দিয়েছিল। অবশ্য তারা এই রিংটি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। রিংটি দিয়ে ব্লটুথ ইনেবলড ডিভাইস নিয়ন্ত্রন করা যেত হাতের জেস্চার ব্যবহার করেই। যেমন আপনি আপনার হাত দিয়ে উপরের দিকে নিয়ে একটি লাইট বাল্ব আকাবেন ; সাথে সাথে আপনার লাইট জ্বলে উঠবে, একইভাবে কোনো ছবি তোলার পর আপনার হাতের আঙুল ওপরের দিকে সোয়াইপ করবেন ; এতে করে ছবিটি ফেসবুকে আপলোড হয়ে যাবে।


প্রশ্ন হল আমাদের হাতের আঙুলের ওপর থাকে, ছোট্ট একটা ডিভাইস তথা আংটি এর ভেতর কি থাকতে পারে? প্রথমত এসব রিং এর মূল টেকনোলজি ব্লটুথ নির্ভর। এটি আপনার স্মার্টফোন অথবা অন্যসব ডিভাইস এর সাথে ব্লুটুথ ব্যবহার করে কমিউনিকেশন করবে। আপনি হয়ত বাজারে ছোট ছোট ওয়্যারলেস হেডফোন দেখেছেন। একইভাবে এগুলোর ভেতর সেরকম ছোট ব্যাটারি থাকবে। যেহেতু এসব স্মার্ট রিং এর ভেতর খুবই ছোট্ট ব্লুটুথ চিপ থাকবে ; তাই এটি কেবল তার নিকটবর্তী ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন এর সাথে কমিউনিকেশন রাখতে পারবে। ব্লটুথ লো-পাওয়ার টেকনোলজি হওয়ার কারনে এসব স্মার্ট রিংএ এটিকেই ব্যবহার করা হবে।

অনেক স্মার্ট রিং এর সাথে আপনি ছোট্ট হাতের নখের সমান স্ক্রীনও দেখতে পারবেন। আর এই স্ক্রীনে সাধারনত আপনি স্মার্টওয়াচ এর মত অত ফাংশনাবিলিটি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। কেবল আপনার স্মার্টফোন থেকে পাওয়া কিছু তথ্য দেখাবে শুধু। এসব স্মার্ট রিং অত্যান্ত ছোট হওয়ার কারনে এগুলোতে কোনো চার্জিং পোর্ট থাকবে না। আর তারবিহীন তথা ওয়্যারলেস চার্জিং এর জন্য এতে ব্যবহার করা হবে আরএফআইডি প্রযুক্তি। অনেক উন্নত স্মার্ট রিং যেমন লগবার এর রিং জিরোর মত স্মার্ট রিং এর ভেতর থাকবে মোশন-সেন্সিং প্রযুক্তি। আর এতে করে এতে হাতের জেস্চার বোঝার মত অনেক ফিচার এক্টিভ হবে।


এটা নিশ্চিত যে,আসছে ভবিষ্যতে ওয়্যারয়েবল ডিভাইসে বাজারে খুব ভালো শক্তপোক্ত স্থান দখল করবে এসব স্মার্ট রিং। উপরে লেখাগুলো পড়ে আমরা এই ধারনা পেলাম যে এসব স্মার্টরিং এর ভেতর কি কি ফিচার তথা সুবিধা থাকতে পারে।যাই হোক ,যেহেতু  রিং এমনিতেই ফ্যাশনেবল ; তারওপর যদি হয় স্মার্ট তবে কে পড়তে চাইবে না? খুবই ছোট এবং কার্যকর হওয়ার কারনে আশা করা যায় ভবিষ্যতে এটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি গ্যাজেটে পরিনত হবে ; যেমন: স্মার্টওয়াচ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button