Technology

কী-লগার কি? | আপনার পাসওয়ার্ড চুরি যাওয়া থেকে বাঁচান

কী-লগার থেকে বাঁচার উপায়

অনলাইনে যেকোনো কাজ করার জন্য যেমন ফেসবুক আইডি চলাতে বা ব্যাংকিং করতে সবকিছুতেই প্রয়োজন পড়ে একটি আইডি এবং একটি পাসওয়ার্ড। এর ভালো কথা তো এটা যে আমরা আমাদের ইচ্ছা মতো লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড সেট করতে পারি। কিন্তু এর খারাপ দিক এটা যে এছাড়া আর কোন অ্যথন্টিকেশন থাকে না। মানে আমি যদি আপনার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানি তবে কম্পিউটার জানবে না যে এটা আমি না আপনি। যদি আমি আপনার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ঠিকভাবে প্রবেশ করাতে পারি তবে আমাকেও অ্যাক্সেস দিয়ে দেবে। তো এই অবস্থায় আইডি এবং পাসওয়ার্ড নিরাপদে রাখা খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কেনোনা আমরা কখনোই চাইবনা যে আমাদের আইডি পাসওয়ার্ড কোন ভুল হাতে চলে যাক, এবং পড়ে সেটা দিয়ে কোন অপব্যবহার হোক। বন্ধুরা আজকের পোস্টে আলোচনা করবো কী-লগার নিয়ে। তো চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।

কী-লগার (Keylogger)

আপনি কি জানেন যে কি এই কী-লগার? বা এটি কি কাজ করে থাকে? দেখুন কী-লগার একটি হার্ডওয়্যার হতে পারে আবার একটি সফটওয়্যারও হতে পারে। যদি হার্ডওয়্যারের কথা বলি তবে এটি দেখতে হতে পারে একটি পেনড্রাইভের মতো। এবং যেকোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপে তা সহজে লাগানো যেতে পারে। আর যদি সফটওয়্যারের কথা বলি তবে এটি যেকোনো একটি সাধারন সফটওয়্যারের মতো দেখতে হতে পারে। আপনি আপনার কম্পিউটারে সেটি ম্যাক, উইন্ডোজ বা অন্য কোন ওএস এ ইন্সটল করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন হলো এটি কি করে। দেখুন বন্ধুরা আপনার কম্পিউটারে যদি কী-লগার লাগানো থাকে সেটা হার্ডওয়্যার হোক আর সফটওয়্যার হোক, তো আপনি আপনার কম্পিউটারে যে কী চেপে থাকুন না কেন, মনে করুন কী চেপে নেটে কিছু সার্চ করেছেন, চ্যাটিং করেছেন, কোন অনলাইন আইডি পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়েছেন। তো এসকল অ্যাকশন কী-লগার সেভ করতে থাকে। পরে যখন সেই কী-লগার লগ কেউ চেক করে তবে সে সহজেই আপনার সকল প্রবেশকৃত কী ইনপুট গুলো পেয়ে যেতে পারে।

দেখুন বন্ধুরা কী-লগারের ভালো এবং খারাপ ব্যবহার দুটিই রয়েছে। এর ভালো ব্যবহার হলো যখন এটি কোন পিতা মাতা ব্যবহার করেন তাদের বাচ্চাকে মনিটর করার জন্য। এমনিতেই আপনি কম্পিউটারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল লাগাতে পারেন এবং নির্দিষ্ট যেকোনো ওয়েবসাইট ব্লক করতে পারেন। তাছাড়াও আপনি মনিটর করতে পারেন যে আপনার সন্তান নেটে কি দেখছে না দেখছে। কিন্তু তারপরেও আজকাল বাচ্চারা অনেক স্মার্ট হয়ে থাকে, সে বিভিন্ন প্রক্সি ব্যবহার করতে পারে, ভিপিএন ব্যবহার করতে পারে আপনার ব্লক করা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করার জন্য। এই অবস্থায় আপনি যদি একটি কী-লগার ব্যবহার করেন, সেটি হার্ডওয়্যার হোক আর সফটওয়্যার হোক তবে আপনি মনিটর করতে পারবেন যে আপনার বাচ্চা কি কি করছে কম্পিউটারে বসে।

আবার অনেক সময় অনেক কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের উপর নজরদারি করার জন্য কী-লগার ব্যবহার করে থাকেন। যে কর্মচারীরা কোম্পানির কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিক করছে না তো? বা তারা এমন কোন জায়গায় ঢোকার চেষ্টা করছে না তো যেখানে ঢোকার অনুমতি তাদের নেই। তো এইসব কার্যকলাপ মনিটর করার জন্য কোম্পানিরা কী-লগার ব্যবহার করে থাকে। তো এগুলো অবশ্যই ভালো ব্যবহার এবং এথেকে অনেক সাহায্যও পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু এর খারাপ ব্যবহারও প্রচুর রয়েছে। এবং বেশিরভাগ ইউজার এটি খারাপ কাজে ব্যবহার করে থাকে। মনে করুন আপনি সাইবার ক্যাফে তে গেলেন কোন ইমেইল প্রিন্ট করার জন্য বা কোন কাজ করার জন্য। তো এই অবস্থায় যদি সেই কম্পিউটারে কী-লগার লাগানো থাকে তবে আপনার সকল তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। আর এটি একদমই সহজ ব্যাপার, সাইবার ক্যাফের মালিক চাইলেই আপনার সাথে এমনটা করতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে হয়তো কেউ আপনার পাসওয়ার্ড চুরি করবে বলে নির্ধারণ করলো এবং সে জানে যে আপনি হয়তো সাইবার ক্যাফেতে যান, তো ঐ ব্যক্তি আগে গিয়ে কম্পিউটারে কী-লগার লাগিয়ে আসতে পারে। আজকের দিনেও অনেকের বাড়িতে কম্পিউটার নেই। তো তারা তাদের কাজ গুলো মোবাইল দিয়ে তো সেরে ফেলে কিন্তু এমন কিছু কাজ থেকে যায় যার জন্য কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য এখনো অনেকে সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করেন। হার্ডওয়্যার ওয়ালা কী-লগার লাগালে তো সহজেই বুঝতে পারবেন যে পিসিতে কিছু লাগানো আছে কিনা। কিন্তু সেটা যদি কোন সফটওয়্যার হয় তবে বুঝতে পারা এক প্রকারের অসম্ভব। কেনোনা কী-লগার বানানোই হয়ে থাকে এমনভাবে যাতে সে লুকিয়ে কাজ করতে পারে।

তো এই অবস্থায় আপনার পাসওয়ার্ড যেকোনো মুহূর্তে চুরি হয়ে যাওয়াটা কোন রকেট সায়েন্স নয়। কিন্তু পরবর্তীবার আপনি যখন কোন সাইবার ক্যাফে যাবেন বা যেকোনো পাবলিক কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তখন আপনার আইডি পাসওয়ার্ড রক্ষা করা আপনার প্রধান করনীয় বিষয় হওয়া উচিৎ। এখন আমি আপনাকে কিছু টিপস শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি আপনার পাসওয়ার্ড এর সর্বাধিক সুরক্ষা দিতে পারবেন এবং আপনি কী-লগার থেকেও বাঁচতে পারবেন।

কী-লগার থেকে বাঁচার উপায়

আরেকটি কথা বলতে ভুলেই গেছিলাম। দেখুন আপনার পাসওয়ার্ড যে শুধু সাইবার ক্যাফে বা পাবলিক কম্পিউটারে হতে পারে এমনটা কিন্তু নয়। আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকেও আপনার পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যেতে পারে। আপনি ভুল করে কোন ওয়েবসাইট থেকে এটি ডাউনলোড করে ফেলতে পারেন বা ইমেইলে হ্যাকার আপনার কাছে কী-লগার পাঠিয়ে দিতে পারে। অথবা বিভিন্ন কৌশলে আপনি কীলগার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। তো চলুন কীভাবে এ থেকে বাঁচা যেতে পারে তা জেনে নেওয়া যাক।

১। বন্ধুরা সবচেয়ে প্রথম ধাপটি হলো এটি, আপনি হয়তো লখ্য করে থাকবেন যে আপনার ব্যাংক এর ওয়েবসাইট গুলোতে ভার্চুয়াল কী বোর্ড এর অপশন থাকে। ভার্চুয়াল কী বোর্ড মানে এটি একটি কী-বোর্ড যা আপনার স্ক্রীনে ভেসে থাকে। এবং ক্লিক করে করে সেখানে ইনপুট করতে হয়। যেহেতু এখানে আপনি কোন কী প্রেস করছেন না ফিজিক্যালি তাই আপনার অ্যাকটিভিটি কোন কীলগার রেকর্ড করতে পারবে না। আর আপনি যদি সাইবার ক্যাফেতে থাকেন তবে অবশ্যই আগে দেখে নিন আপনার ব্যবহার করা পিসিতে কিছু ডিভাইজ লাগানো আছে কিনা। তারপর অনলাইন ব্যাংকিং করার সময় অবশ্যই ভার্চুয়াল কী-বোর্ড ব্যবহার করুন। অনেকে ভার্চুয়াল কী-বোর্ড অপশন সরিয়ে দিয়ে ম্যানুয়ালি কী টাইপ করেন, এটা কখনোই করা উচিৎ নয়।

২। সাইবার ক্যাফেতে ভার্চুয়াল কী-বোর্ড ব্যবহার করেও তেমন লাভ হয় না অনেক সময়। যদি সেই কম্পিউটারটিতে স্ক্রীন রেকর্ডার লাগানো থাকে। হাঁ বন্ধু আমি একেবারেই মজা করছি না আপনার সাথে। অনেক সময় সাইবার ক্যাফে ওয়ালা কম্পিউটারে স্ক্রীন রেকর্ডার লাগিয়ে থাকে। আপনি কি কাজ করলেন আর কে কি করলো তার সমস্ত দিনের রেকর্ড হয়ে থাকবে সেখানে। সারা দিনের রেকর্ডে খুব জোর ১-২ জিবি ফাইল হতে পারে। দোকান বন্ধের সময় খুব আরামে সে বসে আপনার সব কার্যকলাপ রিভিউ করতে পারবে। এই সমস্যা এড়াতে আপনার কম্পিউটার থেকে Ctrl+Alt+Delete চাপুন। এতে আপনি দেখতে পাবেন যে কম্পিউটারটিতে কি কি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম দেখতে পান বা কোন স্ক্রীন রেকর্ডার দেখতে পান তবে তা সেখান থেকে এন্ড করতে পারেন।

৩। মনে করুন আপনি আপনার ইমেইল এর প্রিন্ট নিতে সাইবার ক্যাফেতে গেলেন। এবং শুধু সেই কাজের জন্যই গেলেন। তবে কখনোই সেখানে লগইন করার প্রয়োজন নেই। আপনি সাইবার ক্যাফে থেকে তার ইমেইল অ্যাড্রেস নিয়ে নিন। এবার তাকে আপানার কাজের মেইলটি ফরওয়ার্ড করে দিন। সেটি প্রিন্ট করা হয়ে গেলে তাকে বলুন চোখের সামনে মেইলটি ডিলিট করে দিতে এবং ডিলিট করার পড়ে ট্রাস থেকেও তা পরিষ্কার করিয়ে নিন। আর যদি আপনার মনে হয় যে একেবারে সাধারন মেইল এতে ডিলিট করার কিছু নাই, তো পড়ে থাকতে দিন সেখানে।

৪। অনেক সময় আমরা এমন অবস্থায় পড়ে যাই যে সেখানে হয়তো লগইন করতেই হয়। তো লগইন করার আগে সবকিছু ভালো করে দেখে নিন। আপনি যখন আপনার স্কুল বা কলেজের কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তখনও সতর্ক থাকুন। কেনোনা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এসকল আক্রমণ আপনার চারপাশে কীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

৫। অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তার লখ্যে অবশ্যই আমার লেখা দুইটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে সেগুলো পড়ুন এবং অনুশীলন করুন। আমি প্রায় সেখানে সকল নিরাপত্তা টিপস শেয়ার করেছি। তো সে পোস্ট গুলো অনুসরন করার মাধ্যমেও আপনি আপনার পাসওয়ার্ড চুরি হওয়া থেকে বাঁচতে পারেন। হাঁ আরেকটি ভালো কথা, অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। সেখানে অনেক এমন টুলস পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে আপনি সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। যেমন কিছু কিছু অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহারে প্রত্যেকটি অনলাইন পাসওয়ার্ড ভার্চুয়াল কী-বোর্ড দ্বারা প্রবেশ করাতে পারবেন। আর এটা সাধারন কী-বোর্ড দিয়ে প্রবেশ করানোর চাইতে অনেক বেশি নিরাপদ।

  • কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকা যায়?
  • অনলাইন নিরাপত্তা | আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট কতটুকু নিরাপদ?
  • ম্যালওয়্যার কি? ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়র্মস | কীভাবে বাঁচবো?
  • ফায়ারওয়াল (Firewall) কি? আপনার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়?

৬। অনেকে মনে করেন যে ব্রাউজারে ইনকগনিটো মুড খুলে নিলেই সে সর্বাধিক নিরাপদ হয়ে গেলেন। কিন্তু ইনকগনিটো মুড খুলে কিছুই হয়না। প্রাইভেট ব্রাউজিং বা ইনকগনিটো মুড শুধু হিস্ট্রি সেভ করে না তাছাড়া এটির সাথে নরমাল মুডের তেমন কোন পার্থক্য থাকে না। তাই ইনকগনিটো মুড খুলে একদমই নিশ্চিন্ত হবেন না। বরং উপরের টিপস গুলো অনুসরন করে নেবেন।

শেষ কথা

কী-লগার ব্যবহার করে আপনি আপনার বাচ্চাকে মনিটর করতে চান তো সেটি ভালো কথা, অনলাইনে এরকম অনেক ফ্রী সফটওয়্যার রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি এই কাজ গুলো করতে পারেন। কিন্তু কেউ যদি এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার গোপনীয়তার উপর নজর রাখে তবে এটি একটি মারাত্মক অপরাধ। আপনি যদি কখনো ধরে ফেলতে পারেন তবে অবশ্যই এটির বিরুদ্ধে অনেক শক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করুন। এবং অবশ্যই সব সময় নিজের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা বাঁচাবার চেষ্টা করুন। আশা করছি এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনি আরেকধাপ বেশি সতর্ক থাকতে সক্ষম হবেন। পোস্টটি সকলের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা মতামতে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button