Technology

আর্কাইভ ফাইল কি? ZIP, RAR, 7z, TAR, GZ — ইত্যাদি ফাইল বৃত্তান্ত!

আর্কাইভ ফাইল কেন তৈরি করা হয়?

আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত, আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন (ফাইল ডাউনলোড করতে) বা ল্যাপটপ/ডেস্কটপ এমনকি মোবাইল ডিভাইজ ব্যবহার করে থাকেন, অবশ্যই .zip, .rar, .7z — ইত্যাদি এক্সটেনশনের ফাইল দেখে থাকবেন। আপনি হয়তো বিভ্রান্তির মধ্যে পরে যান, এগুলো আসলে কোন টাইপের ফাইল? আসলে এগুলো কমপ্রেসড ফাইল ফরম্যাট, যেগুলো আর্কাইভ করার জন্য ব্যবহৃত হয়! — এখন প্রশ্ন হচ্ছে আর্কাইভ ফাইল কি? ZIP, RAR, 7z, TAR, GZ ইত্যাদি ফাইল ফরম্যাট গুলো কেন এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়? এই আর্টিকেল থেকে সমস্ত বিষয়টির উপর পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন। তো বড় নিশ্বাস ধরে, এক নিশ্বাসে আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন…


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

আর্কাইভ ফাইল

আপনারা নিশ্চয় কম্পিউটার ফোল্ডারের সাথে পরিচিত, তাই না? কম্পিউটার ফোল্ডার কি? — একটি জায়গা বলতে পারেন, যেখানে একসাথে অনেক গুলো ফাইলকে কপি করে বা মুভ করে রাখতে পারেন। যখন ফোল্ডারটি ওপেন করেন, সেখানের সকল ফাইল গুলো পেয়ে যান, তাই না? আবার আপনি চাইলে কোন ফোল্ডারকে যেকোনো ফোল্ডারের মধ্যে রেখে দিতে পারেন, ফোল্ডারটি কপি করলে বা মুভ করলে সাথে ফোল্ডারের ভেতরের ডাটা গুলোও ফোল্ডারের সাথে চলে যায়। যদি একটু টেকনিক্যাল ভাবে বলা হয়, তাহলে ফোল্ডার তৈরি করার মাধ্যমে কম্পিউটার ফাইল সিস্টেমে নতুন ডিরেক্টরি তৈরি করা যায়। মনে করুণ, আপনি সি ড্রাইভে নতুন একটি ফোল্ডার তৈরি করেছেন, ধরুন ফোল্ডারটির নাম “TecHubs” তাহলে অবশ্যই “TecHubs” নামে একটি ডিরেক্টরি তৈরি হবে আর সেটাকে “C:\TecHubs” এরকম অ্যাড্রেস থেকে সরাসরি অ্যাক্সেস করা যাবে।

এখন, যদিও একটি কম্পিউটার ফোল্ডার অনেক কম্পিউটার ফাইল একত্রে ধারণ করতে পারে, কিন্তু ফোল্ডার নিজে থেকে কোন ফাইলের ন্যায় আচরণ না করে একটি ডিরেক্টরির মতো আচরণ করে। মানে একটি ফোল্ডারকে আপনি ডাউনলোড করতে পাড়বেন না, কিন্তু সেটার মধ্যে থাকা ফাইল গুলোকে ডাউনলোড করতে পাড়বেন। ফোল্ডারের নিজের কোন এক্সটেনশন থাকে না, মানে ঐটা কোন ফাইল নয়, জাস্ট ডিরেক্টরি।

আর্কাইভ ফাইল একেবারেই ফোল্ডারের মতো কাজ করে, এতে একসাথে ফোল্ডারের মতোই অনেক ফাইল ঢুকিয়ে রাখতে পাড়বেন। কিন্তু এটি কোন ডিরেক্টরির মতো আচরণ না করে একটি সম্পূর্ণ ফাইলের মতো আচরণ করে। মনে করুণ উপরের বর্ণিত ফোল্ডারের মধ্যে একটি ইমেজ ফাইল রয়েছে, যেটার নাম “TecHubs.Jpeg” যদি এই ফাইলটিকে অ্যাক্সেস করতে চান তাহলে অ্যাড্রেস হবে; “C:\TecHubs\TecHubs.Jpeg” কিন্তু ইমেজটি যদি কোন আর্কাইভ ফাইলের মধ্যে থাকে, আপনি কখনোই অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সরাসরি ঐ ইমেজ ফাইলটি অ্যাক্সেস করতে পাড়বেন না, তবে অ্যাড্রেস থেকে আর্কাইভ ফাইলটি অ্যাক্সেস করতে পাড়বেন। আর যেহেতু আর্কাইভ একটি ফাইল, তাই এটি ডাউনলোড করা যাবে, সাথে একটি ফাইল ডাউনলোড করার মাধ্যমে আপনি এর মধ্যে অবস্থিত সকল ফাইল গুলোকে একসাথেই ডাউনলোড করে নিতে পাড়বেন। তখন অ্যাড্রেস হবে, “C:\TecHubs.Zip” আর জিপ ফাইল ডাউনলোড করে নিলেই একসাথে এর মধ্যের সকল ফাইল ব্যান্ডেল হিসেবে পেয়ে যাবেন। বুঝতে পেড়েছেন?

আর্কাইভ ফাইল কেন তৈরি করা হয়?

আর্কাইভ ফাইল তৈরি করার প্রথম উদ্দেশ্য নিশ্চয় আপনি বুঝে গেছেন। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটি ফাইলের মধ্যে অনেক গুলো ফাইলকে ঢুকিয়ে রেখে সহজেই একটি সিঙ্গেল ফাইল হিসেবে স্টোর বা ট্র্যান্সফার করা। যদি আপনি ইন্টারনেট থেকে মিউজিক অ্যালবাম ডাউনলোড করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই জানবেন, এক একটি মিউজিক ফাইল সিঙ্গেল সিঙ্গেল করে ডাউনলোড করতে হয়, কিন্তু যদি জিপ (ZIP) আর্কাইভ ফাইল ডাউনলোড করেন, তাহলে একটি ফাইলের মধ্যে সকল মিউজিক ফাইল থাকে, মানে আপনি একটি জিপ ফাইল ডাউনলোড করে একসাথে সম্পূর্ণ মিউজিক অ্যালবাম ডাউনলোড করতে পারেন।

কমপ্রেশন

আর্কাইভ ফাইল তৈরি করার আরেকটি বিশাল উদ্দেশ্য হচ্ছে ফাইল কমপ্রেশন বা ডাটা কমপ্রেশন বলতে পারেন। আসলে কম্পিউটারের স্পেস বাঁচানোর জন্য অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডাটার সাইজ কমিয়ে ফেলা হয়, কিন্তু ইনফরমেশন ঠিকই থাকে। তো আর্কাইভ ফাইলের ক্ষেত্রে কি হয়, একটি ফাইলের মধ্যে অনেক ফাইল থাকে, কিন্তু সাধারণত কম্পিউটারের নজরে এটি একটি সিঙ্গেল ফাইল, রাইট? তাহলে অবশ্যই ফাইলটিকে এমন স্টাইলে সেভ করা সম্ভব যাতে এটি কম স্পেস নিতে পারে। ধরুন, জিপ ফাইলের মধ্যে একটি টেক্সট ফাইল রয়েছে যেখানে ডাটা হিসেবে শুধু “A” লেখা রয়েছে। যদিও এটি আমাদের কাছে একটি ডাটা, কিন্তু কম্পিউটারকে “A” রিপ্রেজেন্ট করতে “01000001” বাইনারিতে ৮টি বিট স্টোর করতে হয়। মানে ফাইলটির সাইজ হবে মোটামুটি ৮বিট, তাই না?

এখন ধরুন একে কোন জিপ আর্কাইভ ফাইলের মধ্যে ঢুকিয়ে কোন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কমপ্রেস করা হল, এবং মনে করুণ অ্যালগরিদমটি হচ্ছে, যদি “01000001” এ রকম প্যাটার্ন দেখতে পাওয়া যায় তাহলে জিপ ফাইল কেবল ডাটাটিকে “01” এইভাবে সেভ করবে। এখন শুধু ঐ অ্যালগরিদমই জানে, সে কোন প্যাটার্ন ব্যবহার করে ফাইলটিকে ছোট বানিয়েছে, তারপরে যখন জিপ ফাইলটি খুলবেন, ব্যাস আগের “01000001” ফাইলে কনভার্ট হয়ে যাবে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, আপনি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, ৮বিটের ফাইলকে ২বিট সাইজের ফাইল বানিয়ে দিতে পারলেন, এখন একে স্টোর করার সময় অনেক কম স্পেস লাগবে। এভাবেই দেখে থাকবেন, ১ জিবির ফাইলকে কমপ্রেস করে ১০ মেগাবাইট বানানো যায় এবং অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায়।

যদিও উপরের প্যারাগ্রাফ থেকে কমপ্রেশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছি, তারপরেও এটি নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল রয়েছে, আপনি চেক করতে পারেন।

ডাটা ব্যাকআপ

অনেক ফাইল একসাথে সেন্ড, ডাউনলোড, সাইজ কমানো ছাড়াও আর্কাইভ ফাইলের আরেকটি বিশেষ ব্যবহার হচ্ছে ডাটা ব্যাকআপ নেওয়ার ক্ষেত্রে। আর্কাইভ ফাইলের আরেকটি সবচাইতে বড় বিশিষ্ট হচ্ছে এটি ডিরেক্টরি স্ট্র্যাকচার ধারণ করতে পারে। আর্কাইভ ফাইলের মধ্যে এর নিজের এক ভিন্ন ডিরেক্টরি স্ট্র্যাকচার থাকে, মনে করুণ সি ড্রাইভ থেকে কোন সফটওয়্যারের সম্পূর্ণ ফোল্ডার আপনি আর্কাইভ ফাইল তৈরি করে নিয়েছেন, এখন ঐ আর্কাইভটি আপনার সম্পূর্ণ ফোল্ডার ডিরেক্টরি স্ট্র্যাকচার ধরে রাখবে।

যদি আবার সি ড্রাইভে এসে ঐ আর্কাইভ ফাইলটি এক্সট্র্যাক্ট করে দেন, তাহলে আগের ফোল্ডারটি হুবহু ফেরত চলে আসবে। এজন্যই শুধু লোকাল কম্পিউটার ব্যাকআপ নয়, ওয়েব সার্ভার থেকেও ওয়েব ফোল্ডার ব্যাকআপ নেওয়ার জন্য আর্কাইভ ফাইল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া আর্কাইভ ফাইলের মধ্যে মেটাডাটা অ্যাড করা যায়, এতে ব্যাকআপটি কতো আগে তৈরি করা হয়েছে, লাস্ট ব্যাকআপ নেওয়ার পরে কোন কোন ফাইল পরিবর্তন হয়েছে, ইত্যাদি তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে।

ডাটা এনক্রিপশন

আর্কাইভ ফাইলের আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে অনেক গুলো ফাইলকে একসাথে এনক্রিপটেড করানো যায়। যেহেতু আর্কাইভ ফাইল তৈরি করার সময় এতে ইচ্ছা মতো অ্যালগরিদম ব্যবহার করা যায়, তাই বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ফাইল গুলোকে এনক্রিপটেড করিয়ে সিকিউরিটিও প্রদান করা যায়। প্রটেক্টেড ফাইল গুলোকে খুলতে অবশ্যই পাসওয়ার্ড অথবা “কী” প্রয়োজনীয় হয়।

বিভিন্ন আর্কাইভিং টুল বিভিন্ন অ্যালগরিদম এবং আলাদা সূত্রে ফাইল এনক্রিপটেড করিয়ে থাকে, তাই সাধারণত এক সফটওয়্যার দিয়ে এনক্রিপটেড করানো ফাইল আরেক সফটওয়্যার দ্বারা ডিক্রিপ্ট করানো যায় না। তবে কিছু কমন আর্কাইভ যেমন, ZIP, RAR, 7z এগুলো অনেক টাইপের সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিক্রিপ্ট করা যায়। হ্যাঁ, যদি আর্কাইভ ফাইলটিকে AES-256 স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে এনক্রিপশন করানো হয়, সেক্ষেত্রে প্রায় যেকোনো আর্কাইভার সফটওয়্যার দ্বারা সঠিক পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়ে একে ডিক্রিপ্ট করানো সম্ভব। ZIP সবচাইতে বেশি ইউনিভার্সাল, তবে RAR ও বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ZIP, RAR, 7z, TAR, GZ — কেন এতো ফাইল ফরম্যাট?

যদি সকল আর্কাইভ ফাইল একই কাজ করে, তাহলে কেন এতো প্রকারভেদ? কেন এতো টাইপের আর্কাইভ ফাইল ফরম্যাট দেখতে পাওয়া যায়? দেখুন, আলাদা আলাদা আর্কাইভ ফাইল ফরম্যাট দেখা যায় এবং এদের বানানো হয়েছে, যাতে বিভিন্ন ফরম্যাটকে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া আলাদা ফরম্যাট গুলোর অ্যালগরিদম, কমপ্রেশন ম্যাথড ইত্যাদি আলাদা টাইপের হয়ে থাকে।

 

যদি উইন্ডোজ কম্পিউটারের প্রোগ্রাম সেটআপ ফাইলের কথা বলি, মানে .EXE ফাইল, তো এটাও আর্কাইভ ফাইলের মধ্যে পরে, কিন্তু এতে সাধারণ ফাইল গুলোকে ঢুকিয়ে রাখা হয় না, বরং প্রোগ্রাম রান করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফাইল গুলোকে এর মধ্যে রাখা হয়। আসলে .MP4 বা .MKV এই মিডিয়া ফাইল গুলোও আর্কাইভ ফাইলের মধ্যেই পড়ে, কেনোনা এতে অডিও ফাইল, ভিডিও ফাইল, মেটাডাটা, সাবটাইটেল ফাইল ইত্যাদি একটি ফাইলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়। আসলে এক ফাইলের মধ্যে অনেক গুলো ফাইল ঢুকে থাকলেই সেটি আর্কাইভ ফাইল বলে বিবেচিত করা যায়, কাজ অনেকটা একই করলেও ফরম্যাট অনুসারে শুধু এক্সটেনশন আলাদা হয়ে থাকে।

যদি কথা বলি, ZIP Vs RAR ফাইল নিয়ে, এভাবে প্রত্যেকটি আলাদা এক্সটেনশন ফাইলের কিছু আলাদা সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ZIP ফাইল, আপনার কম্পিউটার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেম সরাসরি সমর্থন করে। আলাদা কোন সফটওয়্যার মোটেও প্রয়োজনীয় হয় না, ZIP কে তৈরি করতে বা এর ভেতরের ফাইল গুলোকে বেড় করে আনতে। RAR ফাইল ZIP থেকে বেটার কমপ্রেশন টেকনিক ব্যবহার করে, কিন্তু এই টাইপের আর্কাইভ ফাইল উইন্ডোজ বা অনেক অপারেটিং সিস্টেম সরাসরি সমর্থন করে না। WinRAR আর্কাইভার বা 7-Zip আর্কাইভার সফটওয়্যার প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। যদি আপনার বন্ধুকে কোন RAR ফাইল পাঠান, তবে অবশ্যই তাকে জানতে হবে সে কোন টাইপের ফাইলের সাথে কাজ করছে। ব্যাট ZIP ফাইল না বুঝলেও সমস্যা নেই, কম্পিউটারে ডাবল ক্লিক করলেই এটি স্বাভাবিক ফোল্ডারের মতো ওপেন হয়ে যাবে।

একটি ফোল্ডারে ২০টি ফাইল আছে যেগুলো বন্ধুকে মেইল করতে চান, কখনোই ফোল্ডারটি মেইল করা সম্ভব নয়, আপনাকে একে একে ফাইল গুলোকে পাঠাতে হবে। কিন্তু আর্কাইভ ফাইল থাকার ফলে আপনি একত্রে সকল ফাইল গুলোকে পাঠাতে পাড়ছেন, এছাড়া আরো অনেক সুবিধা তো পাচ্ছেনই।

আশা করছি, এই আর্টিকেলে আর্কাইভ ফাইলের সমস্তকিছু, যেগুলো আপনার জানা প্রয়োজনীয় ছিল, আলোচনা করেছি। আমি আর্কাইভার হিসেবে 7-Zip ব্যবহার করি, আপনি কোনটি ব্যবহার করেন? আপনার মতে বেস্ট আর্কাইভার কোনটি? আমাদের সবকিছু নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button