Technology

পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট ট্র্যান্সফার সিস্টেম কি? এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

পি-টু-পি (P2P) পেমেন্ট সিস্টেম কতোটা নিরাপদ?

পিয়ার টু পিয়ার হল এমন এক পেমেন্ট আদান-প্রদান ব্যবস্হা যেখানে প্রদানকারী এবং গ্রহনকারীর মাঝে লেনদেনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কোনো প্রয়োজন পরে না বা তারা আসে না। বর্তমানে বিশ্বে পিয়ার টু পিয়ার লেনদেন এর সবচাইতে বড় উদাহরন হলো পেপাল এবং গুগল ওয়ালেট; এবং আমাদের দেশে বিকাশ। পি-টু-পি (P2P) বা পিয়ার টু পিয়ার লেনদেন এর মাধ্যমে সারা পৃথিবী ব্যাপী পেমেন্ট আদান প্রদান অনেক সহজ এবং দ্রুত হয়ে গিয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে, ৩য় পক্ষ হিসেবে উক্ত ব্যাংকের যেকোন ব্রাঞ্চ কাজ করত। তবে পিয়ার টু পিয়ার মানি ট্রান্সফারিং এ কোনো ৩য় পক্ষ অস্তিত্বের দেখা যায় না। তবে এখন বহু ব্যাংক তাদের বিশেষায়িত মোবাইল অ্যাপলিকেশন বা অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ; একে অন্যের মধ্যে টাকা পাঠানোর সুবিধা তৈরি করে দিয়ে পিয়ার-টু-পিয়ার সিস্টেম চালু করেছে। আর বাংলাদেশেও এরকম দেখা যায় (এবি ব্যাংক) । পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম আগের প্রচলিত ব্যাংকিং ধারায় টাকা আদান প্রদানের রীতিকে বদলে দিয়ে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে। পিয়ার টু পিয়ার বা পি-টু-পি (P2P)   আদান প্রদান সাধারনত ইন্টারনেট তথা প্রযুক্তি ভিত্তিক। এখানে কোনো কাগজ কলম লাগে না।

পি-টু-পি (P2P) পেমেন্ট ট্র্যান্সফার সিস্টেম

পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট ট্র্যান্সফার সিস্টেম মূলত একটি ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি নির্ভর সেবা। পিয়ার টু পিয়ার বা পি-টু-পি (P2P) মানি ট্রান্সফারিং এর ক্ষেত্রে সকলেরই একটি করে ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকে এবং সেই ক্লায়েন্ট অ্যাকাউন্ট এড় সকল তথ্য একটি মূল ব্যাংকিং তথা প্রোভাইডার কোম্পানির সার্ভারে জমা থাকে। যখন কেউ পি-টু-পি (P2P) সার্ভিস ব্যবহার করে একজন আরেকজনকে টাকা পাঠায় তখন মূল ডাটাবেজ এর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, নির্দিষ্ট পরিমান টাকা প্রেরক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপক অ্যাকাঊন্টে পার হয়ে যায়।

আর ব্যাপারটি ঘটে সাধারনত কয়েক সেকেন্ডের ভেতরই। পি-টু-পি (P2P) এর মূল ভিত্তি হল সাধারনত কিছু ডাটার পারাপার। আর এই ডাটার পারাপার এর মাধ্যমে মূল ডাটাবেজ সার্ভার জানতে পারে কোন অ্যাকাউন্ট থেকে  কত টাকা কম আর কোন অ্যাকাউন্টে কত টাকা বেশি করতে হবে ।  পি-টু-পি ট্রান্সফারিং এর ক্ষেত্রে সাধারনত ডাটাগুলো এনক্রিপ্টেড হয়ে পারাপার হয়। আর এখানে পি-টু-পি প্রোভাইডার কোম্পানিকে ডাটা এনক্রিপশন নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়।

যেহেতু এটি একটি প্রযুক্তি নির্ভর তথা নেটওয়ার্ক বেসড সেবা ; তাই কোনোভাবে এটি শতভাগ সুরক্ষিত নয়। তাই কোনো ভালো পি-টু-পি সেবা তথা সার্ভিস বাছাই করতে ,অবশ্যই আগে সেই সার্ভিসদাতা কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করে নিতে হবে। সেই পি-টু-পি সার্ভিস সম্পর্কে মানুষ কি বলে; সেই সার্ভিস ইউজারদের রিভিউ কি; এসকল বিষয়াবলী আগে পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে । নতুন কোনো কোম্পানি হয়ত তেমন নাম ডাক নেই; বেশি কেউ ব্যবহার করেনা এমন পি-টু-পি কোম্পানি বাছাই করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো যেমন হ্যাক হবার ভয় থাকে, তেমনিভাবে পেমেন্ট চুরি বা আত্মসাৎ হবারও ভয় থাকে।

পি-টু-পি (P2P) এর ব্যাবহার

আমাদের দেশের অন্যতম পি-টু-পি মানি ট্রান্সফারিং সিস্টেম হল ব্রাক ব্যাংক এর বিকাশ এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক এর রকেট। বর্তমানে এই দুইটি পি-টু-পি সার্ভিস এই খাতের ৯০% বাজার দখল করে রেখেছে। দেশে শহরে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান করা গেলেও, দেশের ৭০% মানুষ যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য। আর তাদের এই সমস্যাকে সমাধান করেছে দেশের শীর্ষস্হানীয় ব্যাংক পরিচালিত এই দুটি পি-টু-পি সেবা ; বিকাশ এবং রকেট। বিকাশ এবং রকেট ব্যবহার করে প্রাপক এবং প্রেরকের ভেতর টাকা প্রেরন করতে কোনো ৩য় পক্ষ কারো হস্তক্ষেপ লাগে না। তবে এজন্য অবশ্যই টাকা প্রেরক এবং প্রারকের একটি করে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আপনি হয়ত অনলাইনে শপিং করছেন; তখন বিল দেওয়ার সবচাইতে সেরা মাধ্যম হল এটি। অনলাইন থেকে ডোমেইন,হোস্টিং এর মত সার্ভিস কেনার সময়ও পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট সিস্টেমে আমরা বিল প্রদান করে থাকি। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন: কাপড়-চোপড় এর দোকান,রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল সহ নানা রকম প্রতিষ্ঠান আজকাল পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট পদ্ধতি সাপোর্ট করে থাকে। আমাদের দেশও এর বড় একটি উদাহরন ; আমরা অনেক প্রায়ই দেখতে পাব যে, এলাকায় এলাকায় অনেক মুদি দোকান পর্যন্ত রয়েছে যারা কিনা বিকাশ পেমেন্ট সাপোর্ট করে। বিভিন্ন ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা যেমন; ই-কমার্স,অনলাইন সার্ভিস,সফটওয়্যার কেনা-বেঁচা ইত্যাদি ব্যবস্হার প্রসার কখনই হত না ; যদি না পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট সিস্টেম থাকত।

পিয়ার টু পিয়ার এর ফলে সেকেন্ড এর ভেতর যেকোন রকম পেমেন্ট করার ঝামেলা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। আমরা যখন অ্যাপেল স্টোর এবং প্লে স্টোর থেকে কোনো অ্যাপস বা গেমস কিনি তখন আমরা নানারকম পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করি ; যেমন: পেপাল, গুগল ওয়ালেট ইত্যাদি। মাইক্রোসফট তাদের একটি পেমেন্ট মেথড সিস্টেম তৈরি করেছে ; যার নাম মাইক্রোসফট ওয়ালেট। আর এর মাধ্যমে পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট সিস্টেমে যেকোম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের থেকে পেমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবে। তবে মাইক্রোসফট ওয়ালেট ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাদে একে অন্যের মধ্যে টাকা আদান প্রদান করা যায় না।

পি-টু-পি (P2P) পেমেন্ট সিস্টেম কতোটা নিরাপদ?

পি-টু-পি সিস্টেম এর ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে যার সার্ভিসটি আমরা ব্যবহার করছি, তাদের এই সার্ভিসটি কতটা সিকিউরড। এই সার্ভিসে কোনো সিকিউরিটি ফল্ট বিদ্যমান রয়েছে কিনা? আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে আমাদের দেশের জনপ্রিয় পি-টু-পি সিস্টেম বিকাশ এর সিকিউরিটি ফল্ট এর সন্ধান পেয়ে বহু হ্যাকার ভুয়া বিকাশ কর্মকর্তার পরিচয়ে গ্রাহকদের ফোন করে বিশেষ উপায়ে টাকা চুরি করে বা হাতিয়ে নিয়েছে। এরকম আরও নানারকম সিকিউরিটি  ফল্ট এসব পি-টু-পি (P2P) সিস্টেমে থেকেই যায় । আর সেক্ষেত্রে এসব পি-টু-পি সিস্টেম প্রোভাইডারদের এর অভ্যন্তরীন ডাটা পারাপারের ব্যপার নিয়ে আরও অনেক সতর্ক হতে হবে। আর কেউ যেন কোনভাবে এসব ডাটা কোনোভাবে হ্যাক করে এক্সেস করতে না পারে সে দিকে নজর রেখে, যথাযথ এনক্রিপশন নিশ্চিত করতে হবে।

অনেক  পি-টু-পি প্রোভাইডার নানারকম এপিআই উন্মুক্ত করে রাখে, যেন ৩য় পক্ষ কোনো সিস্টেম এটিকে নানাভাবে ব্যবহার করে তাদের পেমেন্ট বাবস্থার সাথে একে যুক্ত করতে পারে। যেমন অনেক ওয়েবসাইট বা অ্যাপে গুগল ওয়ালেট অথবা পেপাল ব্যবহার করে টাকা প্রদান করে নানা জিনিস কেনার অপশন পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে নতুন অনেক পি-টু-পি সার্ভিস এসব এপিআই উন্মুক্ত রাখে; যার ফলে হ্যাকাররা নানা উইক পয়েন্ট বের তা হ্যাকও করতে পায় ; যেহেতু নতুন অনেক বাগ থেকে যায়ই ; সে দিকেও ব্যাবহারকারিকে  লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনলাইন পি-টু-পি অ্যাকাউন্ট এর জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাসওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউনিক এবং শক্তিসালী পাসওয়ার্ড বেছে নিতে হবে। যদি পিন ব্যাবস্থা থাকে সেক্ষেত্রেও খুবই সতর্কতার সাথে একটি ইউনিক পিন ব্যবহার করতে হবে। যদি 2FA সিস্টেম বা 2 ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সিস্টেম থাকে তা অবশ্য অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সকল পি-টু-পি সার্ভিসে ট্রান্জিকশন হিস্টরি চেক করার সুযোগ থাকে ; তাই নিয়মিত তা চেক করতে হবে, এতে করে গোপনে কেউ টাকা নিচ্ছে কিনা তা বোঝা যাবে।


বর্তমামে পৃথিবীতে পেপাল হল সবচাইতে জনপ্রিয় পিয়ার টু পিয়ার মানি ট্রান্সফারিং সিস্টেম। তবে দুঃখের বিষয় আমাদের দেশো আসার কথা থাকলেও, অভ্যন্তরীন গোলযোগের কারনে আমাদের দেশে তারা আসেনি। গুগল এবং অ্যাপেলও তাদের পিয়ার টু পিয়ার মেথড উন্মুক্ত করেছে সেগুলো হল গুগল ওয়ালেট এবং অ্যাপেল পে ক্যাশ। পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক তাদের মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে আমেরিকা, ইংল্যান্ড এর মত দেশে একে অন্যের ভেতর পেমেন্ট আদান প্রদান করার পিয়ার টু পিয়ার মেথড ইতিমধ্যে চালু করে দিয়েছে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতে ফেসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে রূপি আদান প্রদান করার পরীক্ষা চালাচ্ছে। যেহেতু চায়নায় পেপাল,গুগল ওয়ালেট,অ্যাপেল পে এসব ব্যবহার হয়না; সেহেতু সেখানেও গড়ে উঠেছে তাদের নিজস্ব পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম। চায়নায় জনপ্রিয় পিয়ার টু পিয়ার পেমেন্ট সিস্টেম গুলি হল উইচ্যাট পে এবং লাইন পে। জেনে অবাক হবেন যে,চায়নার ভিক্ষুকরাও এসব পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেমে মানুষদের থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে।

যাই হোক, অন্যদিকে আমাদের এই বাংলাদেশে জনপ্রিয় যে দুটি পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম রয়েছে তা হল বিকাশ এবং রকেট। ইতিমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেথড বিকাশ তাদের মোবাইল পিয়ার টু পিয়ার অ্যাপলিকেশন বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। বর্তমামে বিকাশ ব্যবহার করা হয় মোবাইল ইউএসডিডি কোড এর মাধ্যমে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button