ব্যাকরণ

উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয় ও রূপক কর্মধারয় কাকে বলে?

উপমান কর্মধারয় কাকে বলে? উপমান কর্মধারয় এর উদাহরণ।

উপমান পদের সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক শব্দের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় বলে। যেমন— কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুম-কোমল।

এখানে ‘কুসুমের’ সাথে অজ্ঞাত কোনো বস্তুর তুলনা হয়েছে। ‘কুসুম’ ও ‘অজ্ঞাত’ বস্তুটির সাধারণ ধর্ম হল ‘কোমলতা’। এখানে ‘কুসুম’ এ উপমানের সাথে ‘কোমল’ এ সাধারণ ধর্মের সমাসের ফলে উপমান কর্মধারয় সমাস হয়েছে।

উপমান কর্মধারয়ের উদাহরণঃ

  • ঘনের (মেঘের) ন্যায় শ্যাম = ঘনশ্যাম।
  • তুষারের ন্যায় ধবল = তুষারধবল।
  • হস্তীর ন্যায় মূর্খ = হস্তিমূর্খ।
  • কাজলের ন্যায় কালো = কাজল-কালো।
  • বিড়ালের ন্যায় তপস্বী = বিড়ালতপস্বী।
  • শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
  • বজ্রের ন্যায় কঠিন = বজ্রকঠিন।
  • বজ্রের ন্যায় গম্ভীর = বজ্রগম্ভীর।
  • গরুর ন্যায় বেচারা = গোবেচারা।
  • বকের ন্যায় ধার্মিক = বকধার্মিক।
  • নবনীতের ন্যায় কোমল = নবনীতকোমল।
  • ইস্পাতের ন্যায় কঠিন = ইস্পাত কঠিন।
  • জলদের ন্যায় গম্ভীর = জলদগম্ভীর।
  • তুষারের ন্যায় শীতল = তুষারশীতল।

উপমিত কর্মধারয় কাকে বলে? উপমিত কর্মধারয় এর উদাহরণ।

উপমান পদের সঙ্গে উপমেয় পদের সমাসকে উপমিত কর্মধারয় বলে। যেমন— চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ।

এখানে উপমান ‘চাঁদ’-এর সাথে উপমেয় ‘মুখ’-এর সমাস হওয়ার ফলে উপমিত কর্মধারয় হয়েছে।

উপমিত কর্মধারয়ের উদাহরণঃ

  • পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ।
  • আঁখি পদ্মের ন্যায় = পদ্মআঁখি।
  • কর পল্লবের ন্যায় = করপল্লব।
  • লোচন পলাশের ন্যায় = পলাশলোচন।
  • অধর পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব।
  • কপি ফুলের ন্যায় = ফুলকপি।
  • পুরুষ ব্যাঘ্রের ন্যায় = পুরুষব্যাঘ্ৰ।
  • চরণ পদ্মের ন্যায় = চরণপদ্ম।
  • চরণ কমলের ন্যায় = চরণ-কমল।
  • সোনার ন্যায় মুখ = সোনামুখ।
  • মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্ৰ (চন্দ্ৰমুখ)।
  • কণ্ঠ বজ্রের ন্যায় = বজ্রকণ্ঠ।
  • কালের ন্যায় বৈশাখী = কালবৈশাখী।

উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য কি?

উপমান

  • উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমান পদের সঙ্গে উপমান পদের সাধারণ গুণ, প্রকৃতি বা ধর্মের সমাস করা হয়। যেমন — বজ্রের ন্যায় কঠোর বজ্রকঠোর।
  • উপমান কর্মধারয় অন্য পদের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন— তুষার ধবল (কেশ)। তুষারের ন্যায় ধবল = তুষার ধবল।
  • উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমানের সাধারণ গুণ, বা ধর্ম উপস্থিত থাকে।

উপমিত

  • উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে সমাস হয়। যেমন — বজ্রের ন্যায় কণ্ঠ = বজ্রকণ্ঠ।
  • উপমিত কর্মধারয় বিশেষ্য পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন— শীতকালে ফুলকপি পাওয়া যায়। কপি ফুলের ন্যায় ফুলকপি।
  • উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান বা উপমেয়ের কোনো গুণ বা ধর্মের উল্লেখ থাকে না।

রূপক কর্মধারয় কাকে বলে? রূপক কর্মধারয় এর উদাহরণ।

যে সমাসে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় বলে। যেমন— মনরূপ মাঝি = মনমাঝি।

এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। মন ও মাঝির মধ্যে সাদৃশ্য এত নিবিড় হয়েছে যে, মনে হয়, দুই-ই এক অর্থাৎ অভিন্ন।

রূপক কর্মধারয়ের উদাহরণঃ

  • ভবরূপ নদী = ভবনদী।
  • ক্রোধরূপ বহ্নি = ক্রোধবহ্নি।
  • শোক রূপ অগ্নি = শোকাগ্নি।
  • বিষাদ রূপ সিন্ধু (সমুদ্র) = বিষাদসিন্ধু।
  • শোক রূপ সিন্ধু = শোকসিন্ধু।
  • স্নেহ রূপ সুধা = স্নেহসুধা।
  • জ্ঞান রূপ বৃক্ষ = জ্ঞানবৃক্ষ।
  • জীবন রূপ তরু = জীবনতরু।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button