ইন্টারনেট

সম্পূর্ণ ইন্টারনেট কি ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব?

রাতারাতি ইন্টারনেট গায়েব হয়ে যাবে না তো?

টাইটেল দেখেই মারতে চলে আসবেন না প্লিজ! আমি জানি, আমি আজকাল আউট অফ টপিক হয়ে যাই। ওয়্যারবিডি তে এই পর্যন্ত হাজারো টেকনিক্যাল টার্ম গুলোকে এক্সপ্লেইন করেছি, তো একটা মানুষের কাছে আর কতোই বা টপিক থাকবে বলুন? — যাইহোক, এই প্রশ্ন কিন্তু একেবারেই অযৌক্তিক নয়। ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করে সেই অনুসারে দেখতে গেলে ইন্টারনেট রাতারাতি গায়েব করে ফেলা বা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ধ্বংস করা মুশকিল ব্যাপার। কিন্তু অসম্ভব ব্যাপার নয়!

যদিও এটা অসম্ভব কেন নয় এই ব্যাপারে আজকের আর্টিকেলে কিছুই লিখবো না; তবে আলোচনা করবো ইন্টারনেট রাতারাতি গায়েব করে ফেলা বা ধ্বংস করে ফেলা কেন অনেক মুশকিল ব্যাপার!


ইন্টারনেট ধ্বংসের প্রশ্নই আসে কিভাবে?

ভাই এমন অদ্ভূত প্রশ্ন আমার মাথায় না আসলেও অনেকের মাথায় কিন্তু চলেই আসে। আমার খুব স্পষ্ট করে মনে পড়ে, যখন প্রথম ইন্টারনেটে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা পরিবারে জানিয়েছিলাম, আমার পরিবারের কেউই ব্যাপারটা সিরিয়াস ভাবে গ্রহন করেন নি। ব্যাপারটা অনেকটা তাচ্ছিল্যতার সাথেই দেখা হয়েছিলো। আমি ইন্টারনেটে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবো না পারবো না সেটা কিন্তু এখানে মূল প্রশ্ন ছিল না! মূল প্রশ্ন ছিল, আরে যেখানে বড় বড় কোম্পানি পর্যন্ত নাই হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ইন্টারনেট আবার কি জিনিষ? দেখা যায় না, ছোয়া যায় না, এগুলা যে কালকেই হারাবে না তার কোন গ্যারান্টি আছে নাকি?

ঠিক আছে, আমার পরিবারের লোক ইন্টারনেট সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ছিলেন, তাই তাদের মতামত না হয় হিসেবের খাতা থেকে বাদ দিলাম। কিন্তু কোন হ্যাকার গ্রুপ যদি চায়, কেউ যদি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক এর উপরে অ্যাটাক করে, কিংবা কোন দেশের সরকার ই যদি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সেক্ষেত্রে কি হবে? তাহলে কি ইন্টারনেট ধ্বংস হয়ে যাবে? ধরুন, কোন সন্ত্রাসী দল দুনিয়ার নানান জায়গায় হামলা করে অনেক ডাটা সেন্টার ধ্বংস করে দিল, তাহলে কি ইন্টারনেট ধ্বংস হয়ে যাবে?

আচ্ছা, ধরে নিলাম, যে কোনো কারণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে কি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট কে ধ্বংস বা শাটডাউন বা অফ করে দেওয়া যেতে পারে?

তো এবার এক্সপ্লেইন করা শুরু করি, কিন্তু তার আগে ইন্টারনেটের কাজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে, না হলে পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যাবে না।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

এই বিষয়ের উপরে আমার মহা বিস্তারিত এক আর্টিকেল অনেক পূর্বে থেকেই রয়েছে, যেটা আপনি এখানে পড়ে নিতে পারেন; ইন্টারনেট কি ও কিভাবে কাজ করে?

তবে এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তুকে পরিষ্কার করার জন্য আমি মোটেও লিংক ধরিয়ে ফাঁকি মারবো না, বরং এখানে ব্যাপারটিকে আরেকটু সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবো।

প্রথমত: মনে করুন, ইন্টারনেট বলে কোন জিনিস ই দুনিয়াই নেই। আপনার বাসায় ধরুন ৩-৪ টা ডিভাইস রয়েছে যেগুলো লোকাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একে অপরের সাথে কানেক্টেড রয়েছে। এর মানে আপনি চাইলে একটি ডিভাইস থেকে আরেকটি ডিভাইসের মধ্যে যেকোনো ডাটা বা যে কোন ফাইল এর লোকাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আদান-প্রদান করতে পারবেন।

এখন মনে করুন আপনার প্রতিবেশী বন্ধু আপনার এই লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে আপনার কম্পিউটার থেকে সেও কিছু ফাইল ডাউনলোড করতে চায় বা কিছু ডাটা আদান-প্রদান করতে চায়। আবার আপনিও একই ভাবে বন্ধুর কম্পিউটার থেকে কোন ফাইল আদান প্রদান করতে চান। তাহলে কি করতে হবে?

তাহলে এখন ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বা তার ব্যাবহার করে আপনার লোকাল নেটওয়ার্ক এবং আপনার বন্ধুর লোকাল নেটওয়ার্ক একসাথে কানেক্টেড করতে হবে, রাইট? এভাবে আপনার যতগুলো বন্ধু একে অপরের সাথে ফাইল আদান প্রদান করতে চাইবেন, সবার লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে তার বা বেতারে সংযুক্ত করতে হবে, এই তো?

এখন এই একই ব্যাপারটাকে আপনার পুরো মহল্লার উপরে ভাবুন, তারপরে আপনার পুরো থানার উপরে ভাবুন, ধীরেধীরে এটাকে আপনার বিভাগ লেভেল ভাবুন, তারপরে ভাবুন আপনার সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে এমন একটা নেটওয়ার্ক এর সাথে আরেকটা নেটওয়ার্ক যুক্ত। এখানে সবাই সবার লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে বিশাল এক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গেলো, যেখানে সবার ডিভাইস একসাথে কানেক্টেড রয়েছে। তো কি বুঝলেন? হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে ইন্টারনেট, এটা আপনার দেশের নিজস্ব ইন্টারনেট! এভাবে দুনিয়ার আলাদা আলাদা দেশ গুলো আবার আলাদা আলাদা দেশের সাথে তাদের নেটওয়ার্ক শেয়ার করে। আর যার ফলে তৈরি হয় আসল গ্লোবাল ইন্টারনেট সিস্টেম!

তো এই জিনিসের কোন অথোরিটি নেই বা কেউ কিন্তু কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে না, কিংবা এর কোন নির্দিষ্ট সোর্সও নেই! আপনি ইন্টারনেট ব্যাবহার করছেন, এরমানে আপনিও ইন্টারনেটের একটি সোর্স। এখন আপনার পিসিতে ওয়েব সার্ভার সফটওয়্যার ইনস্টল করলে, আপনি ও দুনিয়াকে কনটেন্ট প্রোভাইড করতে পারবেন। ইন্টারনেটের বাপ বলে কেউ নেই, যে সে মাথা থেকে হাত উঠিয়ে নিলে ইন্টারনেট রাতারাতি গায়েব হয়ে যাবে!

আশা করছি বেসিকভাবে ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন। আরো বিস্তারিত জ্ঞান প্রয়োজন হলে উপরের লিংকটি চেক করে নিতে পারেন।

ইন্টারনেট ধ্বংস করা কি সম্ভব?

সম্পূর্ণ ইন্টারনেট যে সিস্টেমে কাজ করে আশা করি এই ব্যাপারটা মোটামুটি আপনার কাছে এখন স্বচ্ছ। একেবারে স্বচ্ছ না হলেও অন্তত বেসিকটা বোঝার কথা। তো এর তৈরীর কাঠামো অনুসারে, এখানে প্রত্যেকটা ইউজারই ইন্টারনেটের একেকটা কন্ট্রিবিউটর। হ্যাঁ ইন্টারনেট এর মধ্যে বেশিরভাগই ক্লায়েন্ট ডিভাইস রয়েছে, তবে চাইলে যে কোন ক্লায়েন্ট ডিভাইস কেউ নিমিষেই সার্ভারে পরিবর্তন করা সম্ভব।

এখন ইন্টারনেট কিভাবে পরিচালিত হবে, কেমন ভাবে চলবে, কোথা থেকে ইন্টারনেট সার্ভ করা হবে, এটা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানের বা কোন দেশের উপর নির্ভর করে না। আপনি যদি ইচ্ছা করেন যে আপনার ডিভাইসগুলোকে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড রাখবেন না, এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের কোনই যায় আসবে না। ঠিক এমন ভাবে কোন দেশের সরকার যদি এরকমটা চিন্তা করে, যে বাকি দুনিয়ার ইন্টারনেট কানেকশন তার দেশে প্রবেশ করতে দেবেন না তো সেক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের কিছুই যায় আসবে না

এক্ষেত্রে কেবল যে দেশটি ইচ্ছা করবে না, কেবল ঐ দেশটিই গ্লোবাল ইন্টারনেট থেকে বঞ্চিত হবে। হ্যাঁ, দেশটি নিজের লোকাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে, যেখানে শুধুমাত্র ওই দেশেরই সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট ডিভাইসগুলো কানেক্টেড থাকতে পারবে। কিন্তু আপনার আমার দেশে ইন্টারনেট ঠিকঠাকমতোই চলবে। এখানে বড়জোর এটা হবে যে আমরা শুধুমাত্র ওই দেশের কোন সার্ভার এর সাথে কানেক্ট হতে পারব না। কিন্তু কোন দেশ যদি নিজেকে ইচ্ছা করে এভাবে বিচ্ছিন্ন করে একবার চিন্তা করে দেখুন এতে আসল লস টা কার?

কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে কোন দেশের সাবমেরিন ক্যাবল নষ্ট করে দেয়, এতেও কিন্তু সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ডাউন হয়ে যাবে না। আলাদা দেশগুলো থেকে ইন্টারনেট ঠিকঠাক মতোই অ্যাক্সেস করা যাবে শুধুমাত্র ওই দেশের ইন্টারনেট অ্যাকসেস এ সমস্যা হতে পারে। আমি “হতে পারে” এজন্য বললাম, কেননা একটি সম্পূর্ণ দেশের ইন্টারনেট কেবল সাবমেরিন ক্যাবল এর উপর নির্ভর করে না। মাইক্রোওয়েভ, স্যাটেলাইট লিংক, এবং আরো অনেক বিনাতারের টেকনোলজির মাধ্যমেও এক দেশ থেকে আরেক দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়।

এখন এই সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সিস্টেমকে আপ রাখার জন্য কোনই যে অভিভাবক নেই, এমনটা কিন্তু নয়। অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যারা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট জুড়ে বিশাল পরিমাণে কনটেন্ট প্রোভাইড করে; যেমন গুগল এর কথা চিন্তা করতে পারেন। আবার এমন অনেক বড় বড় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে যারা সারা দেশে বা এক দেশ থেকে আরেক দেশে তার বিছিয়ে বা ওয়ারলেস টেকনোলজির মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন সরবরাহ করে থাকে।

যদি কোনো কারণে এই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো তাদের সেবা বন্ধ করে দেয় বা কনটেন্ট প্রোভাইডারের সার্ভার ডাউন থাকে তবে ইন্টারনেটে অনেক বড় পার্থক্য দেখা যাবে। কিন্তু তারপরেও সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ডাউন হয়ে বা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ধ্বংস হয়ে যাবে না।

তো দেখুন এখানে প্যাঁচাল পাড়তে চাইলে আরো অনেক যুক্তি দেখানো সম্ভব। কিন্তু আশা করা যায় এতক্ষণে আপনি পরিষ্কার একটা ছবি অঙ্কন করে ফেলেছেন, যে কেন সম্পূর্ণ ইন্টারনেট কে রাতারাতি ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব নয়। এটা এতটাই বিশাল বড় নেটওয়ার্ক যে, দু’চারটা দেশ সম্পূর্ণ এ নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের তেমন কিছু যায় আসবে না।

আর যদি ধরেও নেই, যদি কল্পনাতেও ভাবি যেকোনো ভাবে ইন্টারনেট ধ্বংস হতে পারে, তো সে ক্ষেত্রে সর্বদায় নিজের ইন্টারনেট বানানোর সুযোগ তো রয়েছেই!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button